সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘রামগরুড়ের ছানা/ হাসতে তাদের মানা’। সুকুমার রায়ের চিরকালীন জনপ্রিয়, আপাত মজার ছড়াটি কিন্তু আজকের সময়ও বেশ প্রাসঙ্গিক। অন্তত বিশ্বের একটি দেশে – উত্তর কোরিয়া (North Korea)। কিম জং উনের দেশে এবার হাসিতেও নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বাস হচ্ছে না? উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার খবর অনুযায়ী, আগামী ১১ দিন দেশবাসীর হাসতে মানা। কারণ, এই সময় দেশের প্রাক্তন শাসক কিমের বাবা কিম জং ইলের মৃত্যুবার্ষিকীর শোকপালন চলবে। তাই কেউ এই সময় হাসতে পারবেন না, মদ্যপানও করতে পারবেন না। অন্যথা হলে? কে বলতে পারে – ‘শিব ঠাকুরের আপন দেশে/ আইনকানুন সর্বনেশে’র কোপে পড়ে হয়ত মৃত্যুদণ্ডই ভবিতব্য। অতএব, এই ১১ দিন উত্তর কোরিয়াবাসী বাস্তবিকই ‘রামগরুড়ের ছানা’।
হাসিই শুধু না। এর আগে পোশাক, চুলের ছাঁট, স্টাইল – সব নিয়েই দেশবাসীর উপর ফতোয়া জারি করেছিলেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন (Kim Jong Un)। নিজের ইচ্ছেমতো চুলের ছাঁট কিংবা হেয়ার কালার (Hair colour) করতে পারবেন না উত্তর কোরিয়ার জনগণ। সেই চুলের ছাঁট যদি রাষ্ট্রনেতা কিমের মতো হয়, তবে ষোলো আনা বিপদ। স্টাইল করতে গিয়ে না তাঁর ঠাঁই হয় কারাগারে। এছাড়া নাকে ফুটো করা (Nose Piercing) নিষিদ্ধ এখানে। অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞার তালিকা আরও দীর্ঘ। বিয়ে না হলে লম্বা চুল রাখতে পারবেন না নারীরা। চুল কেটে ফেলতে হবে।
[আরও পড়ুুন: মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাই নেয়নি পাকিস্তান, আমেরিকার রিপোর্টে মুখ পুড়ল ইসলামাবাদের]
এই তালিকা আরও দীর্ঘ হতে চলেছে আগামী ১১ দিন। উত্তর কোরিয়াবাসীর হাসতে মানা। ‘একনায়ক’ কিমের জারি করা একাধিক ফতোয়া নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষেই উঠে এল অতীতের এক প্রসঙ্গ। তাতে আরও চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। বছর নয় আগে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সে দেশে ৭ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন কিম জং উন। তাদের সেই মৃত্যুদৃশ্য দেখতে পরিবারের লোকজনকে বাধ্য করানো হয়েছে। কী ছিল তাদের অপরাধ? জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত র্যাপ ‘কে-পপ’ শুনেছিলেন ওই ৭ জন। দুই কোরিয়ার সম্পর্ক যেহেতু আদায়-কাঁচকলায়, তাই পিয়ংইয়ংয়ে একেবারেই নিষিদ্ধ ‘কে-পপ’। অথচ লুকিয়ে-চুরিয়ে এসব ভিডিও জোগাড় করে ৭ জন তা শুনতেন এবং উপভোগ করতেন। এরপর যেদিন তাঁরা শাসকের নজরে পড়ে যান, সেদিনই সব শেষ। সবাইকে একে একে ফাঁসিকাঠে ঝুলে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
[আরও পড়ুুন: শীঘ্রই হতে পারে রাশিয়া-ভারত-চিন সামিট, ইঙ্গিতবহ মন্তব্য পুতিন ঘনিষ্ঠের]
আসলে কিমের রাজত্বে কী চলছে, না চলছে – তা গোটা বিশ্বের পক্ষে জানা বিশেষ সম্ভব নয়। শাসকদল এসব নিয়ে এতটাই কড়া যে কণামাত্র খবরও সীমান্তের ওপারে প্রকাশ পায় না। দীর্ঘদিন ধরে এমনই চলেছে। তবে আজকের আধুনিক যুগে অনেক কিছুই ফাঁস হয়ে যায়। সেভাবেই কিমের একাধিক ‘অত্যাচারে’র কাহিনি আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজরে এসেছে। তাতে অবশ্য কুছ পরোয়া নহি কিমের। আপন নিয়মে মগ্ন তিনি। এখন ১১ দিন কোরিয়াবাসীর হাসির উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারির খবর জেনে রসিকরা প্রশ্ন তুলছেন – তবে কি এবার হাঁচতে গেলেও কিমের অনুমতি লাগবে? সুকুমার রায় তো কবেই লিখে গিয়েছেন – ”সেথায় সন্ধ্যে ছ’টার আগে, হাঁচতে হ’লে টিকিট লাগে ; হাঁচ্লে পরে বিন্টিকিটে—দম্দমাদম্ লাগায় পিঠে।”