নির্মল ধর: নতুন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় তাঁর চিত্রনাট্যে একটি অভিনব মোচড় রেখেছেন। যার ফলে ছবির দ্বিতীয় অংশ বেশ জমজমাট। সেই মোচড় প্রকাশ করলে এই ছবি দেখার মজাটাই মাটি হবে। ফলে এই লেখায় বলা হবে না। কিন্তু যেটা বলার, তা হল পুরো চিত্রনাট্যের শরীরে একটা হালকা কমেডির ছোঁয়া সারাক্ষণ বজায় রেখেছেন পরিচালক রাহুল। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে এই মিষ্টি কমেডির ছোঁয়াই ‘কিশমিশ’ (Kishmish) ছবির আসল স্বাদ।
ছবির নায়ক কৃশানু (দেব) ছবি আঁকে। সেই কারণে তাঁর ঘরের দেওয়াল জুড়ে নানা বাহারি ছবি। ছবির গতি বৃদ্ধির জন্য চমৎকার ভঙ্গিতে পেইন্টিংসের ব্যবহার। কিছুটা কার্টুন ধরনের সম্পাদনা একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করে। দু’জনের মোবাইলে কথা চালাচালি, গানের মধ্যেও শটগুলোকে নানাভাবে ভেঙে দেওয়ার কৌশল বেশ নতুন চমক ‘কিশমিশ’-এ।
[আরও পড়ুন: হিন্দি বিতর্কে রাশ টানার চেষ্টা! আদালতে স্থানীয় ভাষা ব্যবহারে জোর মোদির]
গল্প কলেজ ছাত্র-ছাত্রীর প্রেম এবং তাঁদের মা-বাবার কিছু সমস্যা নিয়ে। ফুটবলপ্রেমী মোহনবাগান সমর্থক বাবা (খরাজ) ফুর্তিবাজ। স্ত্রী (অঞ্জনা) পুরনো প্রেমিককে ছেড়ে বিয়ে করেছেন। কৃশানু এদের একমাত্র সন্তান। প্রেমে পড়েছে সহপাঠী রোহিণীর (রুক্মিণী)।আচমকা দু’জনে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করবে। ওঁদের বাবা-মা দেখা করে বিয়ে ফাইনাল করতে মিলিত হন। কিন্তু রোহিণীর বাবাকে (কমলেশ) দেখেই এই বিয়েতে গররাজি হন কৃশানুর মা। কেন তা জানার জন্যই বাকি ছবি দেখতে হবে। অবশ্য ফুল মস্তি ছবির মতোই নায়ক-নায়িকা দু’জনে একে অপরের বাবা ও মায়ের সঙ্গে টক-মিষ্টি কথাবার্তায় কীভাবে সমস্যার সমাধান করে, কেমন ভাবে মায়ের পুরনো প্রেম কাহিনি জেনে নিয়ে রোহিণীর বাবার মন জয় করে নেয় কৃশানু, আর রোহিণীও বদলে দেয় কৃশানুর মায়ের মন। সেটা সত্যিই বেশ সুন্দর করে পরিবেশন করেছেন রাহুল।
প্রথম ছবি হিসেবে পরিচালক নিশ্চয়ই পাশ করে যাবেন। তবে তাঁর পাশ নম্বর পাওয়ার পেছনে দেব-রুক্মিণী জুটির রসায়ণটাই আসল। অত্যন্ত ফুরফুরে মেজাজে দু’জনে অভিনয় করেছেন। পর্দার পেছনে ওঁদের সম্পর্কের কেমিস্ট্রি ক্যামেরার সামনেও ফুটে উঠেছে। কিশোর হ্যারি অর্থাৎ ড্যানিয়েল ব়্যাডক্লিফ স্টাইলে গোল কাঁচের চশমা পরে দেব (Dev)। হেয়ার স্টাইলে পাল্টে বয়স অনেক কমিয়ে ফেলেছেন তিনি। মেদও ঝরিয়েছেন। রুক্মিণীও (Rukmini Maitra) রোমান্টিক দৃশ্যে কমেডির পাঞ্চ মিশিয়ে দারুন। ছবির খামতি একটাই- গল্পের বাঁধুনি ভাল না। তবে ভাল কাজ করেছেন ছবির সঙ্গীত পরিচালক নীলায়ান চট্টোপাধ্যায়। “ভেবেই মরে যাই তোমার আমি কে” এবং আরও একটি গানের নাটকীয় ব্যবহার গল্পের গতি পালটে দেয়।
[আরও পড়ুন: ২৫০ বছর পুরনো মন্দির সরানোর নির্দেশ দিল রেল, গণ আত্মহত্যার হুমকি হিন্দুত্ববাদীদের]
আলোকচিত্রী মধুরা পালিতের মুড লাইটিং, আউটডোর লাইটিং নিয়ে মজাদার বিন্যাস ভাল লাগে। চারদিকে রহস্য আর গোয়েন্দা গপ্পের ভিড় বাঁচিয়ে এমন মিষ্টি ছবি বানিয়ে দেব প্রমাণ করলেন তিনি চলতি পথের পথিক হতে চান না। তবে এবার বিষয় নিয়েও ‘সিরিয়াস’ ভাবনার যেতে হবে প্রযোজক দেবকে। কারণ এমন মিষ্টি ছবি বার বার দেখলে কিন্তু দর্শকের ‘সুগার’ বাড়বে! কোনওকিছুই একটানা ভাল না।
- সিনেমা – কিশমিশ
- অভিনয়ে – দেব, রুক্মিণী, খরাজ, অঞ্জনা, কমলেশ্বর, জুন, লিলি
- পরিচালনায় –রাহুল মুখোপাধ্যায়