কৃষ্ণকুমার দাস: ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ঠান্ডার দাপটে কলকাতায় করোনা (CoronaVirus) সংক্রমণের তীব্রতা আরও বৃদ্ধির প্রবল আশঙ্কা রয়েছে বলে পুরসভাকে সতর্ক করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। বিশেষ করে আচমকা ঠান্ডা লেগে সর্দি-জ্বর হলে শরীরে ‘ইমিউনিটি’ কমে যাওয়ায় শহরবাসীর কোভিডে (COVID-19) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। ভাইরোলজিস্টরা জানিয়েছেন, যাঁদের কো-মর্বিডিটি আছে, বিশেষ করে ফুসফুসের নানা অসুখ রয়েছে তাঁদের এবারের শীত খুবই ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে। বস্তুত, এই কারণে কোভিড আক্রান্ত শনাক্তকরণে মহানগরে করোনা পরীক্ষা সেন্টার আরও ৫০টি বৃদ্ধি করছে কলকাতা পুরসভা (KMC)।
বর্তমানে শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরসভার ৭২টি সেন্টারে অ্যান্টিজেন টেস্ট মারফত করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ও স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশাসক অতীন ঘোষ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, “শীতের কারণেই করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সেন্টার বাড়িয়ে ১২০/১২২টি করার টার্গেট নেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ৮টি ভ্রাম্যমান অ্যাম্বুল্যান্সের সাহায্য মোবাইল-ল্যাবরেটরি মারফত লালারস সংগ্রহের কাজও চলবে।”
[আরও পড়ুন: দূরপাল্লার ট্রেন কম থাকায় টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে, হাওড়া-শিয়ালদহ এখন দালালদের স্বর্গরাজ্য]
কলকাতায় ইতিমধ্যে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ এবং মৃতের সংখ্যা ২৫২৫ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই নতুন করে সংক্রমিতের সংখ্যা ৮০০ জনের বেশি থাকছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ৮৬৭ জন, মারা গিয়েছেন ১১ জন। যদিও এই সময়ে তিলোত্তমায় ৮৮৩ জন সুস্থ হয়েছেন। তবে একটা বড় সংখ্যক মানুষ উপসর্গহীন সংক্রমিত হয়ে সমাজের বিভিন্নস্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর উপর লোকাল ট্রেন চালু হয়েছে, মেট্রো রেলও পরিষেবা অনেকটা বাড়িয়েছে। কিন্তু শীত আসায় ফুসফুসের রোগ সংক্রান্ত সমস্ত ভাইরাসই প্রতিবছর অনেক বেশি ‘সক্রিয় এবং হিংস্র’ হয়ে ওঠে। বস্তুত, এই কারণে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে কলকাতা-সহ সমস্ত পুরসভাকেই ভাইরাসঘটিত অসুস্থতা নিয়ে বিশেষ নজরদারি করার জন্য সর্তক করা হয়েছে।
তাই শীতের কয়েক সপ্তাহ কোভিড সংক্রমণের ‘তীব্রতা ও হিংস্রতা’ বৃদ্ধির আশঙ্কা নিয়ে পুরভবনে মঙ্গলবার হেলথ অফিসারদের নিয়ে জরুরি বৈঠকও করেন প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র। পরে তিনি জানান, “শুধু মাস্ক পরলেই চলবে না, এবার সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে যেন কিছুতেই ঠান্ডা না লাগে। চিকিৎসকরা তো বলছেন, ঠান্ডায় সর্দি-জ্বর হলেই শরীরের ইমিউনিটি ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রবল বাড়ছে।” ইউরোপের দেশগুলির পাশাপাশি খাস দিল্লিতেই শীতের দাপট বৃদ্ধির পাশাপাশি সমানে কোভিডের প্রকোপ ভয়াবহ হারে বেড়েছে। বস্তুত রাজধানীতে করোনার ভয়ংকর তাণ্ডবের জেরে শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত কলকাতা পুরসভা বাড়তি সতর্ক হয়ে হেলথ সেন্টারগুলিতে প্রস্তুত রাখছে।