সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: কলকাতা ও হুগলির সরকারি জলপ্রকল্পে ডিভিসির (DVC) ছাড়া ঘোলা জল ঢুকে পড়ায় মহানগর ও শহরতলির পুরসভা এলাকায় পানীয় জলের সংকট শুরু। উত্তর ও মধ্য কলকাতার পাশাপাশি উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটি, চাঁপদানি, চন্দননগর, চুঁচুড়া ও বাঁশবেড়িয়ায় পাইপ লাইনে ঘোলা জল পড়ছে। হুগলির পুরসভাগুলি কার্যত পানীয় জলে পানে আপাতত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, কিন্তু কলকাতার কোনও বিধিনিষেধ নেই। তবে এদিন বিকেল থেকেই উত্তর ও মধ্য কলকাতার বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে চড়া দাম দিয়ে পানীয় জলের জার কিনে খাচ্ছেন। হুগলির বিভিন্ন পুরসভায় কেএমডিএ’র জল প্রকল্পের একাধিক পাম্প ডিভিসির ওই ঘোলা জলের ধাক্কায় বিকল হয়েছে বলে রবিবার রাতে স্বীকার করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।
একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “আপাতত পলতা থেকে পাঠানো টালা ট্যাঙ্কের জল সরবরাহ শহরে কম হবে। তবে টালার পাঠানো জল ঘোলাটে রঙ হলে খাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাও নেই।” যদিও এদিন উত্তর কলকাতায় ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোলাটে পানীয় জল ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের আবেদন জানিয়ে প্রচার করেছে পুরসভার বরো অফিস। তবে পুরসভা ও কেএমডি’র এই ঘোলা জলের ধাক্কার জন্য ডিভিসির কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে বলে খবর।
[আরও পড়ুন: হিমাচলে ট্রেকিংয়ে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, বাড়ি ফিরল কফিনবন্দি দেহ, কান্নায় ভেঙে পড়ল পরিবার]
সোমবার থেকে আগামী দু’তিন দিন কলকাতায় পানীয় জল সরবরাহ বিঘ্ন হবে। টালার পাশাপাশি হুগলি নদী থেকে জল তুলে চালানো গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্পেও বিশেষ নজরদারি শুরু করেছেন পুরকর্তারা। জল সরবরাহ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ররা রাতে স্বীকার করেছেন, বারাকপুরের পলতা জল প্রকল্পে নদী থেকে তোলা ডিভিসির ছাড়া কাদা মেশানো ঘোলা জল ঢুকে পড়ছে। বন্যার এই জল পলতা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে ঢুকে কাদা থিতিয়ে গেলেও জলের রঙ ঘোলা থেকে যাচ্ছে। ডিভিসির জন্যই পলতা থেকে টালায় আসা জলের রঙ ঘোলা হচ্ছে। ডিভিসির ছাড়া ঘোলা জল মিশে যাওয়ায় গঙ্গার জলের ঘনত্ব অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। তাই নয়া প্রযুক্তি লাগিয়েও পুরোপুরি শোধন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বস্তুত সেই কারণে, টালা ট্যাঙ্ক থেকে উত্তর ও মধ্য কলকাতার সমস্ত ওয়ার্ডে পাঠানো জলের রঙ ঘোলা ও লালচে হচ্ছে। এতদিন নদীর নিচতল থেকে জল নেওয়া হত পলতায়। কিন্তু সোমবার থেকে নদীর উপরের জলস্তর থেকে পানীয় জলপ্রকল্পে জল টানা হবে। কারণ, ডিভিসির ছাড়া ঘোলা ও কাদা মাখা জল তুলনায় ভারী হওয়ায় নদীর জলপ্রবাহের তলদেশ দিয়ে যাচ্ছে। ফিরহাদ জানান,“আগামী কয়েকদিন এখন নদীর উপরের জলস্তর থেকে পাইপ দিয়ে অল্প অল্প করে জল পলতায় টানা হবে। তাই জল সরবরাহের জোগান একটু কম হতে পারে।
হুগলির উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত সমস্ত পুর এলাকাগুলিতে পুরসভার পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা বিশুদ্ধ পানীয় জল এদিন হঠাৎই ঘোলা হওয়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি কেএমডিএ’র ইঞ্জিনিয়রদের নজরে আসতেই পরীক্ষা ডিভিসির ঘোলা জলের বিষয়টি ধরা পড়ে। দূষণের আতঙ্ক ছড়ায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। উত্তরপাড়া পুরসভার তরফে মাইক লাগিয়ে নাগরিকদের ওই ঘোলা জল পান করতে নিষেধ করা হয়। পুর প্রশাসক দিলীপ যাদব বলেন, “কেএমডিএ ইঞ্জিনিয়ররা যতক্ষণ পর্যন্ত এই জল ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন না ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।”