শুধুমাত্র হাড় শক্ত করতেই নয়, পুরুষদের যৌন আকাঙ্ক্ষা টিকিয়ে রাখতেও অনিবার্য ভিটামিন D। ইরেকটাইল ডিসফাংশন শরীরের এই ভিটামিনের অভাবে পরিলক্ষিত হয়। বিস্তারিত জানালেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অনির্বাণ দলুই।
চল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই দেখা যাচ্ছে পুরুষের যৌন ক্ষমতা বা ইচ্ছে দুটোই হ্রাস পাচ্ছে। মূলত ইরেক্টাইল ডিসফাংশন নিয়ে নাজেহাল হচ্ছে মানুষ। কিন্তু সংকোচ বা অজ্ঞতার কারণে খুব সহজ বিষয়গুলো নিয়ে পরামর্শ না নেওয়ার কারণে সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, আজকাল হাড়ের সমস্যা বা হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদির পিছনে ভিটামিন D কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে যদিও বা জনমানসের মাথাব্যথা রয়েছে। কিন্তু এই ভিটামিনের অন্যান্য গুরুত্ব নিয়ে তেমন সচেতনতা নেই। এর মধ্যে একটি হল পুরুদের যৌন ইচ্ছেশক্তি ঠিক রাখা। এর অভাবেই ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সমস্যা বাড়ছে। ভিটামিন D-র অভাব ঘটলে হাড় ক্ষয় থেকে শুরু করে চুল পড়ে যাওয়া, অবসাদ, মেরুদণ্ডে ব্যথা, চামড়া-সহ মারাত্মক সব সমস্যা হতে পারে। সঙ্গে যৌন ক্ষমতাও কমে যেতে পারে এর ঘাটতিতে।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন কী?
ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ইডি) পুরুষদের মধ্যে পাওয়া একটি যৌন সমস্যা। এই রোগে, পুরুষরা যৌন মিলনের সময় তাদের যৌন অঙ্গে শিথিলতা অনুভব করেন। যার কারণে যৌন মিলনে সন্তুষ্টি থাকে না। এর সঙ্গে আরও অনেক ধরনের যৌন সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দেয়। ইরেকটাইল ডিসফাংশনের অনেক কারণ থাকতে পারে। বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা সত্যিই বেশি এবং খুব সহজলভ্য। তাছাড়া কিডনির রোগ, হার্টের সমস্যা, স্থূলতা, মানসিক চাপ, হতাশা এবং ডায়াবেটিস ছাড়াও ধূমপান, অ্যালকোহল বা ওষুধের ব্যবহার এর প্রধান কারণ। এর ফলে দেহে বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাওয়া টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে ভিটামিন D চাই
যে ভিটামিনগুলি শরীরের অঙ্গগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে ভিটামিন D শরীরে রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে। যৌন মিলনের সময় রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় উত্থানে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই ইরেকটাইল ডিসফাংশন শরীরে ভিটামিন D-র অভাবে দেখা যায়। কুড়ি বছরের বেশি বয়সের প্রায় তিন হাজার জন পুরুষের উপরে করা একটি অতি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে রক্তে ভিটামিন D-র ঘাটতির কারণে ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর ঘটনা ঘটছে।
আরও বিশদে বললে যাদের শরীরে ভিটামিন D-র মাত্রা প্রতি মিলি-তে ২০ ন্যানোগ্রামের কম তাদের ইরেকটাইল ডিসফাংশন হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার শরীরে ভিটামিন D-র মাত্রা প্রতি মিলিতে ৩৫ ন্যানোগ্রামের বেশি হলে দেখা যাচ্ছে এই সমস্যা কমে যাচ্ছে ।গবেষণায় এও দেখা গিয়েছে যে অন্যান্য হরমোনের অভাব সরিয়ে রাখলে শুধুমাত্র ভিটামিন D-র ঘাটতিতেই এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে।
[আরও পড়ুন: Health Tips: মহিলাদের জন্য কলা খাওয়া কতটা নিরাপদ? গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালেন বিশেষজ্ঞ]
কীভাবে ভিটামিন ইরেকটাইল ডিসফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে?
বৈজ্ঞানিকরা বলছেন ভিটামিন D-র অভাবে রক্তবাহের দেয়ালে এন্ডোথেলিয়াল স্তরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষণায় জানা গেছে ভিটামিন D-র একটি মাত্র ডোজেই এই সমস্যা কমতে শুরু করে। ভিটামিন D আবার নাইট্রিক অক্সাইডের তৈরিতে সাহায্য করে। এই নাইট্রিক অক্সাইড লিঙ্গোত্থানের জন্য রক্তবাহের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন D। এমনকী, এই হরমোনকে তার রিসেপ্টরের সঙ্গে জুড়ে কার্যকর হওয়াতেও সাহায্য করে। আরও দেখা গেছে এই ভিটামিন শরীরের প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো কমিয়ে রাখে, যার ফলে ইরেকটাইল ফাংশন ঠিক থাকে।
সমস্যা সমাধানের উপায়
ইরেকটাইল ডিসফাংশন থাকলে ভিটামিন D3-র মাত্রা পরীক্ষা করে নেওয়াটা খুব জরুরি। এর অভাব থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ভিটামিন D-র ক্যাপসুল বা সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যায়। এই সাপ্লিমেন্ট একটা অত্যন্ত সাশ্রয়জনক এবং কার্যকর প্রক্রিয়া। প্রতিদিন ১০০০ আইইউ (IU) ভিটামিন D পরিপূরক কয়েক সপ্তাহ পর রক্তের মাত্রায় প্রতি মিলিতে ১০ ন্যানোগ্রাম ভিটামিন D বাড়িয়ে দেয় বলে আশা করা হয়। কিন্তু ভিটামিন D-র গুরুতর অভাব হলে কয়েক মাসও সময় লাগতে পারে।
প্রতিকার
স্বাভাবিকভাবেই, ভিটামিন D সবচেয়ে সহজে সূর্যের আলোতে পাওয়া যায়। তাই দিনের কিছুটা সময় সূর্যের আলোয় কাটাতে পারলে ভালো হয়। তাছাড়া মাশরুম, পাস্তুরাইজড দুধ, মাছ, ডিমের কুসুম জাতীয় খাবারও ভিটামিন D-র ঘাটতি পূরণ করতে পারে।