ট্রেনে-বাসে একটু দাঁড়িয়ে থাকলেই যন্ত্রণায় টনটন করে ওঠে কোমর। কারও হাঁটুতে অসহ্য ব্যথা। কোন কোন অসুখের জন্য যন্ত্রণা এমন নিত্যসঙ্গী হয়? খোঁজ দিলেন বিশিষ্ট অর্থোপেডিক-সার্জন ডা. সুজয় কুণ্ডু। শুনলেন শ্রীজা ঘোষ।
বাসে বয়স্কদের জন্য বরাদ্দ সিটটিতে বসেছিলেন সদ্য পঞ্চাশ পেরনো অভিজিৎবাবু। কিছুদূর যেতে না যেতেই এক বৃদ্ধকে দেখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। কয়েক বছর ধরেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই কোমর থেকে হাঁটুতে ছড়িয়ে পড়া যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন। ফাঁকা ট্রেনে বসে যাওয়ার জন্য অফিস টাইমের ভিড় শুরুর আগেই স্টেশনে পৌঁছে যান বছর তিরিশের সুপর্ণা। মাস কয়েক ধরেই কাঁধের যন্ত্রণা বেড়ে গিয়েছে। তাই বাসে-ট্রেনে হাতল ধরতে খুব কষ্ট পান। এই ব্যথাগুলি ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার পিছনে বেশ কিছু রোগ লুকিয়ে রয়েছে। এবং এই রোগগুলি ব্যথার গোড়ার কথা।
লাম্বার স্পন্ডিলোসিস:
পঞ্চাশোর্ধ্বদের কোমরে এই সমস্যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই কোমরে ব্যথা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়বেই।
ইনফ্লামেশন অফ ডিস্ক:
মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধি বা ভারটিব্রার (vertebra) মাঝখানে যে ডিস্ক থাকে সেখানে ঝাঁকুনির কারণে অনেক সময়ই জ্বালাভাব অনুভব করে থাকেন রোগী। এই সমস্যা অল্পবয়সিদের মধ্যে দেখা যায়।
ডিস্ক হারনিয়েশান বা (পিআইভিডি):
এই ধরনের সমস্যা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। ফলে বাসে-ট্রামে হাঠাৎ ব্রেক কষলে কিন্তু ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কোমরের হাড় সরে গেলে গাড়িতে ঝাঁকুনি বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বেড়ে গিয়ে ভোগান্তি হয় রোগীদের।
ভারী ব্যাগ কাঁধে বা হাতে নিয়ে দিনের পর দিন বাস-ট্রামে যেতে হয়। এই ধরনের যন্ত্রণাগুলির জন্য সাধারণত ঘাড়ে ব্যথা বা সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস হয়। বয়সজনিত কারণে এই রোগ হতে পারে। এছাড়াও যে কারণগুলির জন্য ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে যেমন দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকা, ঘাড়-মুখ গুঁজে একভাবে কাজ করা।
কী করবেন: কাজের সময় দেহভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে সারভাইক্যাল ট্রাকশন বা কলার ব্যবহার করুন। তবে এই প্রত্যেকটি ব্যথার হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ফিজিওথেরাপি করা অত্যন্ত জরুরি। মাথা ঘুরলে কলার ব্যবহার করুন।
করবেন না: ভারী জিনিস বহন বা উঁচু বালিশে শোবেন না। বেশিক্ষণ ঝুঁকে কাজ করবেন না।
হাঁটু ব্যথা: যাঁদের হাঁটুতে ব্যথা রয়েছে তাঁরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজকর্ম করলে ব্যথা বাড়তে পারে। অনেক সময় ব্যথা এমন পর্যায় পৌঁছে যায় যে ১৫ মিনিট দাঁড়ালেই হাঁটু ব্যথা শুরু হয়ে যায়। অনেক সময় নিতম্ব সন্ধিও আক্রান্ত হয়। এর ফলে বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করলেও অসুবিধে হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস আসলে একটি ক্ষয়মূলক বাত। তবে দুর্ঘটনার কারণে কম বয়সেও এটি হতে পারে। এক্ষেত্রে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো, সিঁড়ি ওঠানামা করা ঠিক নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কথা মেনে চলে ফিজিওথেরাপি করা যেতে পারে। তবে নি-ক্যাপ না পরাই ভাল। এতে হাঁটুর আড়ষ্টতা বাড়ে।
[ওজন কমাতে চান? নিয়মিত খান ঝাঁজালো লঙ্কা]
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত:
দেহের ছোট ছোট অস্থি সন্ধিগুলি আক্রান্ত হয়। বংশগত কারণে রোগটি হয় এবং মহিলাদের মধ্যেও দেখা যায় বেশি। অস্থি সন্ধিগুলি বেঁকে বিকৃত ও আড়ষ্ট হয়ে যায়। তাই সংশ্লিষ্ট সন্ধিগুলিকে অচল না করাই ভাল। এবং ঠান্ডা জলে স্নান বন্ধ রাখতে হবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ওধুই গ্রহণ করবেন। এর পাশাপাশি শরীরচর্চা অত্যন্ত জরুরি।
গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি:
এক্ষেত্রে অনেক সময় ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে গেলে ব্যথার অনুভব হয়। দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার পর মাটিতে পা ফেলতে গেলেও যন্ত্রণা হয়। এই রোগটি সাধারণত কোনও কারণে গোড়ালির উপর চাপ সৃষ্ট হলে হয়।
কষ্ট কমাতে: নরম জুতো ব্যবহার করুন। গরম সেক দিন। প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খান। হিলযুক্ত ও শক্ত জুতো ব্যবহার করবেন না।
[স্বাস্থ্য ফেরানোর জন্য মেনে চলুন এই টিপসগুলি]
অস্টিওপোরোসিস:
অস্থির ঘনত্ব কমে সহজেই ভঙ্গুর হয়ে যায়। সাধারণত ভিটামিন-ডি’র অভাব যা কিনা রোদ্দুরের অভাব থেকে বেশি হয়। এছাড়াও শরীরে অন্যান্য ভিটামিনের মাত্রাও ঠিক রাখা উচিত।
পেনফুল আর্ক সিন্ড্রোম:
অনেক্ষণ ধরে বসে-ট্রেনে হাতল ধরে থাকলেও কাঁধে যন্ত্রণা হয়। প্রথমে বোঝা যায় না। অনেক সময় রোগী বুঝতেও পারে না যে কাঁধের যন্ত্রণা কোথা থেকে হচ্ছে। ফিজিওথেরাপি ও শরীরচর্চা করাই একমাত্র উপায়। যন্ত্রণা কমানোর জন্য চিকিৎসকরা অনেক সময় ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দিয়ে থাকেন। তবে তা সাময়িক যন্ত্রণা লাঘব করে। জীবনযাপনের ধরন এবং দেহভঙ্গি বদল করলেও যন্ত্রণা কম হয়।
The post ট্রেনে-বাসে একটু দাঁড়ালেই কোমরে ব্যথা? জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ appeared first on Sangbad Pratidin.