অর্ণব আইচ: অর্থের লোভ। নিজের ভাগ্নেকেই অপহরণ মামার। প্রলোভনের শিকার কলকাতার ১৫ বছরের এক কিশোর। দীর্ঘদিন ধরেই ১৩১ নং সিআর অ্যাভিনিউয়ের ওই কিশোরকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিল মামা। অবশেষে মামার প্রলোভনে পা দিয়ে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে সে। কিন্তু চার-পাঁচদিন ধরে তার কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না বাবা-মা। অবশেষে বিহার থেকে এল হুমকি ফোন। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ না দিলে হারাতে হবে ছেলেকে। যা আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তোলে সিআর এভিনিউয়ের ওই পরিবারের।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য, বিশেষ পর্যবেক্ষককে অপসারণের দাবি তৃণমূলের]
ছেলেটির বাবা একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থায় কর্মরত। কাজের প্রয়োজনে তিনি থাকেন আফ্রিকার কঙ্গোতে। দিন পাঁচেক আগে ওই কিশোর বাবা-মা কে বলেই বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু তারপর থেকেই আর খোঁজ মিলছিল না ওই কিশোরের। রীতিমতো চিন্তায় ছিলেন মা। জোড়াসাঁকো থানায় একটি মিসিং ডায়েরিও করা হয়। ছেলেকে নিয়ে চিন্তার মধ্যেই একটি ফোন কল ঘুম উড়িয়ে দেয় তাঁর বাবা-মায়ের। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ না দিলে হারাতে হবে ছেলেকে। বিহার থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয় পরিবারকে। কিশোরের পরিবার অপহরণকারীকে জানায়, তাদের পক্ষে অত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। শুরু হয় দর কষাকষি। শেষ পর্যন্ত আয়ুষের মুক্তিপণ ঠিক হয় ১৫ লক্ষ টাকা। অপহরণকারীরা জানায়, বিহারের ঝাঁঝায় ওই মুক্তিপণের ১৫ লক্ষ টাকা পৌঁছে দিতে হবে। আতঙ্কিত পরিবার পুরো ঘটনা জানায় জোড়াসাঁকো থানার পুলিশকে।
[আরও পড়ুন:অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রায় বাধা, মাকে শ্বাসরোধ করে খুন ছেলের]
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তরফে ইন্সপেক্টর সুব্রত পালের নেতৃত্বে জোড়াসাঁকো থানার পুলিশবাহিনী কিশোরের বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। গতকাল রাত আটটা নাগাদ বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ওই দলটি। প্রথমে কলকাতা থেকে আসানসোল যান তাঁরা। তারপর সেখান থেকে ট্রেন বদলে যান ঝাঁঝা স্টেশনে। অপহরণকারীরা ফোনে জানায়, মুক্তিপণের টাকা একটি ফাকা জায়গায় রেখে দিতে হবে। সেই মতো ফাকা জায়গায় টাকা রেখেও দেন আয়ুষের বাবা-মা। কিন্তু তারপরেও ছেলের সন্ধান পাননি তারা। এরপর অপহরণকারীরা ফোনে ছেলেটির বাবা-মাকে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেন। এরই মধ্যে ছেলেটির বাবার নজরে পড়ে একটি ফাঁকা জায়গায় মুক্তিপণের টাকা ভাগ করছেন তাঁর শ্যালক এবং একজন দুষ্কৃতী। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ওঠেন তিনি।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া দুষ্কৃতীরা হলেন, মণীশ কুমার চৌরাসিয়া এবং সুমিত কুমার দুবে। এদের মধ্যে মণীশ সম্পর্কে কিশোরের মামা। জামাইবাবুর টাকার লোভেই সে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে। অভিযুক্তদের কাছে খবর পেয়ে পাটনা থেকে ছেলেটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
The post ভাগ্নেকে অপহরণ করে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি, জালে অভিযুক্ত মামা appeared first on Sangbad Pratidin.