অর্ণব আইচ : করোনার (Coronavirus) দ্বিতীয় ঢেউ (2nd wave) আঘাত করছে কলকাতাকে। করোনা রুখতে চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকেই কলকাতার প্রত্যেকটি বাজারে শুরু হল পুলিশের প্রচার। মাইক নিয়ে করোনা সম্পর্কে সতর্কতা প্রচার শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ধরপাকড়ের উপর আরও গুরুত্ব দিল পুলিশ। বুধবার কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে মাস্ক (Mask) না পরার অভিযোগে দেড়শো জনের উপর পথচারীকে ধরা হয়। এর মধ্যে নিউ মার্কেট এলাকা থেকে হাতেনাতে ধরা পড়ে ১৫ জন। অন্যান্য বাজারেও মাস্ক না পরলেই তাকে ধরেছে পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ, করোনা আক্রান্তর সংখ্যা কলকাতায় বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও বহু পথচারী ও গাড়ি, বাস আরোহীর মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক নেই বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদেরও। এবার সেদিকেও বিশেষ নজর পুলিশের। পুলিশের উপর ভোটের ডিউটির চাপ রয়েছেই। সেই সঙ্গে এবার করোনা রোখারও ব্যবস্থা নিল পুলিশ।
গত বছর করোনার ঢেউ কলকাতায় আছড়ে পড়ার পর লাগাতার সচেতনতার প্রচার শুরু করে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু আক্রান্তর সংখ্যা কমতে থাকায় সেই প্রচারে ভাটা পড়ে। যদিও সংখ্যায় কম হলেও মাস্ক না পরার অভিযোগে চলছিল ধরপাকড়। গত মাস থেকে ধরপাকড়ের ব্যাপারে আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু করোনা আক্রান্তর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবার গত বছরের আদলেই প্রচার করতে শুরু করল পুলিশ।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে রাজ্যে বাড়তে থাকা চাহিদার মধ্যেই হাসপাতাল থেকে খোয়া গেল ৩২০ ডোজ করোনা টিকা!]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখে ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতার কয়েকটি মন্দিরে। তার আগে এদিন বাংলা বর্ষের শেষ দিনটায় চৈত্র সেলের বাজারেও ভিড় হতে শুরু করে। সাধারণত বাংলা নববর্ষে কালীঘাট মন্দিরে প্রচণ্ড ভিড় হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এদিন থেকেই কালীঘাট মন্দিরের আশপাশে প্রচার শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেও চলবে এই প্রচার। মন্দিরে দর্শনার্থীরা যাতে পারস্পরিক দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলেন, তার জন্য হচ্ছে প্রচার।
এদিকে, বুধবার দুপুর থেকেই কলকাতার প্রত্যেকটি বাজারে করোনা বিরোধী সচেতনতার প্রচার শুরু করে প্রায় প্রত্যেকটি থানা। পুলিশের অভিযোগ, এই বছর এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষই করোনা নিয়ে সচেতন নন। তাই বাজারগুলিতে আসা বেশিরভাগ ক্রেতা, এমনকী, বিক্রেতাদের মুখেও নেই মাস্ক। পারস্পরিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। এদিন নিউ মার্কেট অঞ্চলে মাস্ক না পরে নামতে দেখলেই ওই যাত্রীকে ধরেছে পুলিশ। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে গড়িয়াহাট, যদুবাবুর বাজার, যাদবপুর, হাতিবাগানের মতো বাজারগুলিতেও। এ ছাড়াও ওই বাজারগুলিতে মাস্ক না পরে কেনাকাটা করার অভিযোগেও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন।
[আরও পড়ুন: দেশে বাড়ছে সংক্রমণ, ভারত সফর কাটছাঁট করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন]
বড়বাজারের অন্তত পাঁচটি এলাকা, পোস্তা বাজার, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, ভবানীপুর, উত্তরের হাতিবাগান, মানিকতলা বাজারে শুরু হয়েছে লাগাতার প্রচার। কোথাও-বা করোনা নিয়ে সচেতনতার প্রচারের জন্য তৈরি হয়েছে ক্যাম্প। লালবাজারের নির্দেশে মাইক নিয়ে কলকাতার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে শুরু হয়েছে প্রচার। বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বলা হচ্ছে, তাঁরা যেন অবশ্যই মাস্ক পরেন। যেন তাঁরা স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখেন। প্রতে্যককে পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়।
লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, গত বছর থেকে শুরু করে প্রত্যেক দিন মাস্ক না পরার জন্য কলকাতায় ধরপাকড় হয়। সোমবারও ১৩৩ জন, মঙ্গলবার ১৫৭ জনকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টে মামলা করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে ধৃতদের থানায় নিয়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসিয়েও রাখা হচ্ছে। তবে ধরপাকড়ের সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক বিলি করার ব্যাপারেও পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই এদিন যেখানে যেখানে প্রচার হয়েছে, সেখানেই পুলিশ মাস্ক বিলি করেছে।
অনেক ক্ষেত্রে যাদের মুখে মাস্ক নেই, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের হাতে পুলিশ মাস্ক তুলে দিয়েছে। মুখে মাস্ক না থাকলে তাঁর মুখে মাস্কও পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে বলা হয়েছে, এর পর থেকে তিনি যেন মাস্ক না পরে বাড়ির বাইরে না বের হন। কিছু জায়গায় পথচারীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজারের শিশি। গত বছর কলকাতায় ‘মাস্ক আপ’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করেছিল কলকাতা পুলিশ। এবার তারই আদলে মাস্ক বিলি করা শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এই প্রচার এখন লাগাতার চলবে।