অর্ণব আইচ: গম ও চাল প্যাকেজিং সংস্থা অঙ্কিত ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে এই বছর চার্জশিট পেশ করেছিল কলকাতা পুলিশই। গত জানুয়ারিতে ওই সংস্থার দুই কর্ণধার দীপেশ চন্দক ও হীতেশ চন্দকের বিরুদ্ধে পুলিশই পেশ করেছিল চার্জশিট। পাঁচ বছর আগে এই দুই ভাই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের হাতেই।
রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেন যে, এই দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য তিনিই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারই ভিত্তিতে সিআইডি ও কলকাতা পুলিশ তদন্ত করে। সূত্রের খবর, এই ব্যাপারে মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট ও দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর থানায় আলাদাভাবে মামলা দায়ের হয়। ২০১৮ সালের ২৪ আগস্ট ধাপার বাসিন্দা তারক মণ্ডল এজেসি বোস রোডের সংস্থা অঙ্কিত ইন্ডিয়ার কর্ণধার দুই ভাই দীপেশ চন্দক ও হীতেশ চন্দকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলার তদন্তভার ইডি নেওয়ার পর হাওড়ার ডোমজুড়ে অঙ্কিত ইন্ডিয়ার গোডাউন, এজেসি বোস রোডের অফিস ও চন্দক পরিবারের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সংস্থার অফিস থেকে এক কোটি টাকা উদ্ধার হয়। ওই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে রেশন বন্টন দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানের সরাসরি যোগের অভিযোগ ওঠে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও জেরা করা হয়।
[আরও পড়ুন: চাঁদনি চকে ফের অগ্নিকাণ্ড, কালো ধোঁয়ায় ঢাকল গোটা এলাকা]
এদিকে, ইডি ও পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, রেশনের জন্য গমকল ও চালকলে পাঠানো গম ও চালের একটি অংশ রেশন ডিলারদের কাছে না গিয়ে মিল ও ডিস্ট্রিবিউটরদের যোগসাজসে তা চোরাপথে পৌঁছে যেত ডোমজুড়ে অঙ্কিত ইন্ডিয়ার গোডাউনে। সেই গম ও চাল প্যাকেটজাত হয়ে চলে যেত বাজারে। পাঁচ বছর আগে ভবানীপুর থানায় হওয়া এই মামলার ভিত্তিতে তদন্তের পর চন্দক ভাইদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। দীপেশ ও হীতেশ চন্দকের বিরুদ্ধে নিম্নমানের চাল সরবরাহ, চাল হাতানো ও ভুয়া কৃষকদের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সরকারি সহায়ক মূল্যের টাকা হাতানোর অভিযোগ আনা হয়। ওই অভিযোগপত্রে তখনই বলা হয় যে, এটি একটি বড় চক্র, যেখানে প্রভাবশালীদের যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা এই কাজে যুক্ত হয়ে রাজ্য সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করছেন। তখন ভবানীপুর থানার পুলিশই প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করে। উল্লেখ্য, বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতেও সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন দীপেশ চন্দক। পরে তিনি ওই মামলায় রাজসাক্ষীও হন।
চন্দকদের বিরুদ্ধ পেশ হওয়া চার্জশিটে সরকারি আধিকারিকদের যোগসাজসের তথ্য উঠে আসে। পেশ হওয়া চার্জশিটে উল্লেখ করা আছে, কীভাবে সরকারি আধিকারিক ও কৃষি সমবায় সমিতির সদস্যদের মদতে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, পুলিশ কয়েকজন ভুয়া কৃষকের বক্তব্য রেকর্ড করে। তাঁরা আদালতে গোপন জবানবন্দিও দেন। তাঁরা পুলিশকে জানান, তাঁরা কোনওদিনই ধান বিক্রি করেননি। কিন্তু ধান বিক্রি না করলেও সরকারি সহায়ক মূল্যের টাকার একটা ভাগ তাঁরা পেয়েছিলেন। একইসঙ্গে পুলিশ অঙ্কিত ইন্ডিয়ার কয়েকজন কর্মচারীর বক্তব্যও রেকর্ড করেছিল। জেরায় তাঁরা জানান, কয়েকজন সরকারি আধিকারিক ও সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের সাহায্যে কেবল খাতায় কলমে কৃষকদের থেকে ধান কেনা হত। হাওড়ার একটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির দুই আধিকারিকের বয়ান ও গোপন জবানবন্দি পুলিশ রেকর্ড করে। তাঁদের কাছ থেকেও একই তথ্য মেলে। পুলিশ তদন্তের সময় একাধিক কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির রেজিস্টার খাতা, সমিতির আধিকারিকদের সই ও সিল, খাদ্য দপ্তরের ধান কেনার শংসাপত্রের মতো বহু নথি উদ্ধার করে। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে ওই সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।