সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: লিকুইড পেট্রলিয়াম গ্যাসের চাহিদা মেটানোর কাজে বড়সড় সাফল্য পেল রাজ্য সরকার ও ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড। ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে হলদিয়া থেকে সরাসরি দুর্গাপুর, বজবজ ও কল্যাণী পর্যন্ত লিকুইড পেট্রলিয়াম গ্যাস পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইল না। সেপ্টেম্বর মাসেই মাটির নিচ থেকে এলপিজি পৌঁছাবে দুর্গাপুরে। পুজোর আগে এটা নিঃসন্দেহে এক খুশির খবর বলে মনে করছেন অনেকেই।
[বন্যাবিধ্বস্ত কেরলের পাশে বঙ্গ সিপিএম, একমাসের বেতন দান বিধায়কদের]
পারাদ্বীপ-হলদিয়া-দুর্গাপুর প্রকল্পের হলদিয়া থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত ২৬৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয় অনেকদিন আগেই। বাগনান থানার গোপালপুরে দেড় কিলোমিটার এলাকায় সেই পাইপলাইন বসানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি স্থানীয় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যে কারণে ২০১৬-র নভেম্বরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পাইপলাইনের কাজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ জেলাপ্রশাসন ও ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষকে সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত পাইপলাইন বসানোর নির্দেশ দেন। প্রশাসনিক তৎপরতায় সেই সমস্যা দূর করে গত ১৮ জুলাই থেকে পুনরায় পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। এখন সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন, উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক তুষার সিংলা। এই কাজে ১৩৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সম্প্রতি মহকুমা শাসক ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাগনান-১ এর বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের কন্সট্রাকশন বিভাগের চিফ জেনারেল ম্যানেজার রাজেশ গুপ্তা ও জেনারেল ম্যানেজার আর এন চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরা জানান, এখন বজবজ বটলিং প্ল্যান্টের ১০০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। সেপ্টেম্বরে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ চালু হওয়ার পর সেই চাহিদা মিটবে।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে ১৩,৩৯১ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে সারা ভারতবর্ষে ৯৪.৭৯ এমএমটিপিএ পেট্রলিয়াম পণ্যদ্রব্য সরবরাহ করা হয়। যার মধ্যে এলপিজি আছে ৯.৫ এমএমএসসিএল। এজন্য পারাদ্বীপ ও হলদিয়া রিফাইনারি থেকে এই মুহূর্তে ওড়িশার বালাসোর পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া, বজবজ, কল্যাণী এবং দুর্গাপুর এলপিজি ডিপোতে সড়কপথে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। শুধুমাত্র হলদিয়া থেকেই প্রতিদিন ১২০০ ট্যাঙ্কারে গ্যাস লোডিং করা হয়। প্রতিটি ট্যাঙ্কারে এক হাজার মেট্রিক টন গ্যাস থাকে। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে অন্ততপক্ষে ৭০ শতাংশ ট্যাঙ্কার রাস্তা থেকে উঠে যাবে। যার ফলে যানজট ও দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমবে। কমে যাবে পরিবহণ খরচ ও দূষণের পরিমাণ। ঘরে ঘরে এলপিজি সরবরাহ করা হলে জ্বালানি হিসাবে কাঠ, কয়লা ও ঘুঁটের মতো পরিবেশ দূষণকারী জ্বালানির ব্যবহারও কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইন্ডিয়ান অয়েলের আধিকারিকরা। তাঁরা জানান, হাওড়ার মহিষরেখা থেকে বজবজ ও হুগলির মাঝেরগ্রাম থেকে কল্যাণী পর্যন্ত দুটি সুপার লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ১১৭০ কিলোমিটার এলাকায় গ্যাসের পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। যার জন্য ৩৪৯৮.৩ কোটি টাকা খরচ ধার্য করা হয়েছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য পরিবহণ খরচ অনেকটাই কমে যাবে। তাই এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য কিছুটা কমানো সম্ভব কিনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন মহকুমা শাসক তুষার সিংলা।
[এবার লঞ্চে বসেই জানা যাবে ট্রেন-বাসের সময়, উদ্যোগ পরিবহণ দপ্তরের]
The post কাটল জট, পুজোর আগেই রাজ্যে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে শুরু গ্যাস সরবরাহ appeared first on Sangbad Pratidin.