অর্ণব আইচ: হেলমেট ছাড়া কেউ বাইক চালাবেন না। বাড়ির ছেলেদের অবশ্যই বলবেন, বাইকে যেন তিনজন আরোহী না থাকে। রাত বা দিন যখনই তারা বাইক নিয়ে বের হোক যেন এই নিয়মগুলি মানে। আর কোনওসময়ই যেন বেপরোয়াভাবে বাইক না চালায়।
‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেন’। এবার বাইক নিয়ে শহরবাসীকে সতর্ক করতে দরজায় দরজায় যাবে পুলিশ। শহরের বিশেষ কিছু এলাকার প্রত্যেকটি পরিবারকে গিয়ে বোঝাবেন পুলিশ আধিকারিকরা। প্রাথমিকভাবে লালবাজার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে এলাকাগুলির যুবক ও তরুণ বেশি সংখ্যায় হেলমেট ছাড়া বাইক চালিয়ে বা ‘ট্রিপল রাইডিং’ করে ধরা পড়বেন। শহরের সেই এলাকাগুলিতেই প্রথমে ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেন’ চালাবে ট্রাফিক পুলিশ।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, গত কয়েকদিন ধরে দেখা গিয়েছে, রাতের শহরে হেলমেটহীন বাইক আরোহী ও বাইকে দু’জনের বেশি আরোহীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি রাতের কলকাতায় প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়াকে হেনস্তার পিছনে যারা ছিল, তাদের কারও হেলমেট ছিল না। ট্রিপল রাইডিং-ও করেছিল। একই ঘটনা ঘটেছিল এনআরএসে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলা চালাতে আসা বাইকবাহিনীর ক্ষেত্রেও। অভিযোগ, বিবিবাগান থেকে আসা একেকটি বাইকে ছিল অন্তত তিনজন করে আরোহী। তাদেরও কেউ হেলমেট পরেনি।
[আরও পড়ুন- বিড়ি চেয়ে না পাওয়ায় খাস কলকাতায় বন্ধুকে খুন যুবকের]
পরপর এই দু’টি ঘটনার পর ফের রাতে বেপরোয়া বাইক আরোহী ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এই অভিযানে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে থাকছেন থানা, রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, কুইক রেসপন্স টিমের পুলিশকর্মীরা। এবার থেকে প্রত্যেক রাতেই শহরের ২৫টি থেকে ৩০টি জায়গা বেছে নিয়ে ‘সারপ্রাইজ চেকিং’-এর জন্য নাকা তৈরি করছে পুলিশ। প্রত্যেক রাতে পরিবর্তন করা হচ্ছে নাকার জায়গা ও সময়। এমনভাবে হঠাৎই তা করা হচ্ছে, যাতে শহরবাসী সেই তথ্য আগে থেকে জানতে না পারেন। ঘণ্টাখানেক আগে পুলিশের টিমকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোন কোন জায়গায় নাকা হবে। প্রত্যেকদিনই নাকার সময় পাল্টানো হচ্ছে, যাতে বাইক আরোহীরা আগে থেকে কিছু বুঝতে না পারেন। এই নাকা চেকিং, গাড়ি ও বাইক পরীক্ষা এবং রাতের শহরে বেপরোয়া গাড়ি ও দুর্ঘটনায় রাশ টানতে বেশি রাত থেকে ভোররাত চলছে নজরদারি। সবকিছু খতিয়ে দেখতে সারা শহরজুড়ে টহল দিচ্ছেন একজন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (এসি) পযমর্যাদার পুলিশ অফিসার। মূলত ট্রাফিক বিভাগের এসিরাই এই টহলের দায়িত্বে থাকছেন। সঙ্গে থাকছে একটি পুলিশ টিম। রাতে শহরবাসীর সুবিধার জন্য লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমেও বাড়ানো হয়েছে পুলিশকর্মী ও অফিসারদের সংখ্যা। ১৫ দিন অন্তর সারা শহরজুড়ে ‘ব্লক নাকা’ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসাররা।
[আরও পড়ুন- উষসী কাণ্ডের জের, শহরজুড়ে ‘এসওপি’ জারি করল লালবাজার]
লালবাজার জানিয়েছে, বুধবার রাতে নাকায় ২০৫ জন হেলমেটবিহীন বাইক আরোহী ধরা পড়েছে। ‘ট্রিপল রাইডিং’ বা দুইয়ের বেশি আরোহী বাইকে চড়ার অভিযোগে ধরা পড়েছে ৩১৫ জন। আটক হয়েছে ৬টি বাইক। মঙ্গলবার রাতে ধরা পড়েছিল ৩৩৫ জন হেলমেটবিহীন বাইক, ‘ট্রিপল রাইডিং’য়ে ধরা পড়েছিল ১৯৩ জন। বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর অভিযোগে ৫১ জন ও মদ্যপান করে বাইক ও গাড়ি চালানোর অভিযোগে ২০ জনকে ধরা হয়। আগামী কয়েকদিন নাকা চালিয়ে ধৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা হবে। জানা হবে, ধৃতদের মধ্যে বেশিরভাগ কলকাতার কোন কোন এলাকার বাসিন্দা। সেই এলাকাগুলিতে জুলাই মাস থেকেই পুলিশ শুরু করতে পারে ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেন’। লালবাজারের কর্তাদের মতে, অনেক সময়ই বাড়ির লোক বা অভিভাবকরা জানেন না যে, তাঁদের বাড়ির ছেলেরা নিয়ম না মেনে বেপরোয়াভাবে বাইক চালাচ্ছে। অন্যের বাইকে চড়ছে। এতে জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে। এই বিষয়গুলি পরিবারের লোকেদের বোঝালে তাঁরাই বাড়ির ছেলেদের উপর রাশ টানবেন। ফলে বাইক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে অপরাধের সংখ্যাও কমবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
The post ‘হেলমেট পরুন’, বেপরোয়া বাইকচালকদের সতর্ক করতে বাড়ি বাড়ি যাবে পুলিশ appeared first on Sangbad Pratidin.