সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উষ্ণায়ন ছিল শুধুই বিপদের পূর্বাভাসমাত্র। এবার পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে চলেছে সাক্ষাৎ মহাবিপর্যয়। প্রচণ্ড দাবদাহের জেরে উষ্ণতা বাড়তে বাড়তে কার্যত জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হতে চলেছে বিশ্ব-চরাচর। অবিলম্বে পদক্ষেপ না করলে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার স্পর্শ করে ফেলবে ১.৫ ডিগ্রির সূচক। প্রাণ বাঁচাতে হাতে সময় আর মাত্র বারো বছর।
সব থেকে উদ্বেগের বিষয়, শুধু ভারত নয়। উপমহাদেশের যে দুই শহরে এই বিপর্যয় অচিরেই হানা দিতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান নাম কলকাতা। দ্বিতীয়টি করাচি।
নিমেষে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়া এই রিপোর্ট সোমবার প্রকাশিত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চিয়নে। রাষ্ট্রসংঘ নিযুক্ত ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর বিজ্ঞানীরা এই রিপোর্টে যে তথ্য দিয়েছেন, তা অনুযায়ী ভয়ংকর এক ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে কলকাতা। ২০১৫ সালে ভারতে যে মারণ তাপপ্রবাহ চলেছিল, তাতে অন্তত ২,৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের শঙ্কা, তিন বছর আগের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে অচিরেই। তীব্র দাবদাহে ছারখার হতে চলেছে দেশ। ভুগতে চলেছে কল্লোলিনীও। দেশের গড় তাপমাত্রা যেমন তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে চলেছে, তার সঙ্গে তাল রেখেই দিনে দিনে আরও উষ্ণ, আরও তপ্ত হতে চলেছে কলকাতাও। শহরে আগের তুলনায় বাড়তে চলেছে গ্রীষ্মের মেয়াদ। বাড়তে চলেছে তাপপ্রবাহের মাত্রা। উদ্ভিদ বা প্রাণিকুল–কারও পক্ষেই সেই চরম তাপমাত্রার সঙ্গে যুঝতে পারা সম্ভব নয় বলেই রিপোর্টে আগাম সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়। বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা হল, কলকাতার ক্ষেত্রে আগামীর সেই চিত্র আরও বিপজ্জনক হতে চলেছে মূলত দু’টি কারণে। এক, মহানগরীর বুকে ডিজেল চালিত গাড়ির আধিক্য এবং দুই, সমুদ্র থেকে এই শহরের দূরত্ব। পরিবেশবিদদের দাবি, এর ফলে শহরে দমবন্ধ করা, অস্বস্তিকর এক প্রকার আবহাওয়া সৃষ্টি হবে, যার ফলে বাড়বে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগের প্রকোপ। তাঁদের মতে, কলকাতাকে এই মহাবিপর্যয়ের ঘানি সবচেয়ে বেশি টানতে হবে ঠিকই, কিন্তু দেশের অন্যান্য মেট্রো শহর যেমন বেঙ্গালুরু, দিল্লি এবং চেন্নাইয়ের মতো শহরও এই বিপদের হাত থেকে পুরোপুরি নিস্তার পাবে না।
[ পুজোর মুখে শহরে মিলল বিদেশি মাদক, গ্রেপ্তার স্কুল পড়ুয়া-সহ ৩ ]
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জেরে পৃথিবার গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইতিমধ্যেই ১ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির জেরে আগের তুলনায় আরও দ্রুত হারে গলছে আন্টার্কটিকার বরফ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার পৌঁছে যাবে ১.৫ ডিগ্রিতে। যার ফল হবে মারাত্মক। আর যদি তা আরও বেড়ে একেবারে ২ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়, সেক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির বহর হবে অকল্পনীয়। জলস্তরের উচ্চতা বাড়বে। বন্যার হার বৃদ্ধি পাবে। ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে পড়বে দ্বীপ এলাকা এবং সমুদ্র-তীরবর্তী শহরগুলি। সেগুলির সলিলসমাধি যেমন ঘটবে, তেমনই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে সমুদ্রের তলদেশের উদ্ভিদকুল।
তবে বিপদের শঙ্কা জাহির করার পাশাপাশি ভয়ঙ্কর সেই বিপদ রুখে দেওয়ার উপায়ও বিজ্ঞানীরা তাঁদের রিপোর্টে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রথমত পৃথিবীবাসীকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস (যা গ্রিন হাউস গ্যাসের অন্যতম) নির্গমনের হার হ্রাস করতেই হবে। আর দ্বিতীয়ত, যদি কোনওভাবে সেই গ্যাস নিঃসরণের হার কমানো না যায়, তাহলে এমন কোনও উদ্যোগ নিতে হবে যার মাধ্যমে এই গ্রিন হাউস গ্যাস পরিবেশ থেকে সহজেই শুষে নেওয়া সম্ভব করা যায়। এছাড়াও দূষণের হার কমাতে হবে, যার জন্য প্রচুর সংখ্যায় বৃক্ষরোপণ করতে হবে। তৃতীয় বিকল্প হিসাবে সৌরশক্তি এবং জলবিদু্যতের ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের সাফ কথা, এই দাওয়াই মেনে চললে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ুর ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নচেৎ মহাসংকটের মুখে পড়তে হবে ভূ-ভারতকে।
[ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, পুজোর মুখে বৃষ্টির পূর্বাভাস ]
The post মহাবিপর্যয়ের মুখে কলকাতা, রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে উদ্বেগ appeared first on Sangbad Pratidin.