shono
Advertisement

স্বপ্নপূরণের লড়াই, হামাগুড়ি দিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির পড়ুয়া

প্রতিকূলতার কাছে হার মানতে নারাজ পড়ুয়া।
Posted: 09:39 PM Nov 16, 2021Updated: 09:39 PM Nov 16, 2021

দীপঙ্কর মণ্ডল: ব্রিটিশ আমলের লম্বা সিঁড়ি। হামাগুড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন ছাত্রটি। এইভাবেই তাঁকে কয়েকশো সিঁড়ি উঠে ক্লাস করতে হয়েছে। উপায় নেই। দুরারোগ্য রোগে জন্মের পর থেকে দু’টি পা অকেজো। মায়ের কোলে চেপে পেরিয়েছেন স্কুল–কলেজ। মফস্বলের চৌকাঠ ডিঙিয়ে এবার তাঁর দাখিলা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে (Presidency University)। কিন্তু প্রতিকূলতার কাছে হার মানতে নারাজ তিনি।

Advertisement

মঙ্গলবার ছিল ভূগোল স্নাতকোত্তর ক্লাসের প্রথম দিন। সবসময়ের মতো সঙ্গে আছেন মা। কিন্তু একে নতুন জায়গা তায় নতুন বন্ধুদের উপস্থিতি। মায়ের কোলে চাপতে কিছুটা লজ্জা তো থাকেই। ক্লাসে যাওয়া-আসার পথে তাই নিজেই ভাঙলেন একের পর এক সিঁড়ি। বছর দুই বন্ধ থাকার পর আনলকের প্রথমদিনে এমন বেনজির ইচ্ছাশক্তির সাক্ষী থাকল রাজ্যের উচ্চশিক্ষার প্রথম সারির ‘পাঠশালা’।

[আরও পড়ুন: ‘তল্লাশির নামে মেয়েদের গোপন জায়গায় হাত দেয় BSF’, বিধানসভায় উদয়নের মন্তব্যে বিতর্ক]

ছাত্রর নাম রোহিত রায়। বাড়ি নদিয়ার নবদ্বীপে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে তাঁর বাবা, ছোট মুদির দোকান চালান। কিন্তু তাই বলে পড়াশোনা তো থেমে থাকতে পারে না। মা রেবাদেবী ছেলেকে কোলে নিয়ে রোজ পৌঁছে যেতেন নবদ্বীপ বকুলতলা স্কুলে। উচ্চমাধ্যমিকে ৮৩ শতাংশ পাওয়ার পর তাঁকে ভরতি করা হয় কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে। স্নাতকে আসে ৭১ শতাংশ নম্বর। প্রেসিডেন্সি শুধু কোনও নির্দিষ্ট পরীক্ষায় পাওয়া নম্বর দেখে না। পড়ুয়ার সামগ্রিক মূল্যায়ণের পর ঠাঁই হয় এই কুলীন প্রতিষ্ঠানে। সেইমত অনলাইনে আবেদন। কাউন্সেলিংয়ের পর রোহিত জানতে পারেন, রাজ্যের বেশিরভাগ মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন প্রতিষ্ঠানেই তিনি পড়তে পারবেন।


নবদ্বীপ থেকে এদিন মায়ের সঙ্গে ভোর রাতে রওনা হন রোহিত। ট্রেনে চেপে হাওড়া স্টেশন। তারপর বাসে কলেজ স্ট্রিট। প্রথমদিন ছেলেটির ঘোর যেন কিছুতেই কাটে না। ট্রাম লাইন আর কফি হাউসের গল্প এতদিন শুধু শুনেছেন। এদিন নিজের চোখে দেখলেন। আর এত বড় ক্লাস রুম! এত উঁচু সিঁড়ি ডিঙিয়ে তাঁকে ক্লাসে পৌঁছতে হবে! হাতে ভর দিয়ে শরীরটিকে শূন্যে ছুড়ে বিশেষ কৌশলে সিঁড়ি ভাঙা শুরু। নেমে আসার পর নিরাপত্তারক্ষীরা জানালেন এখানে লিফট আছে। তা ব্যবহার করতে পারেন যে কেউ। লাজুক রোহিতের জবাব, “আমার আজ প্রথমদিন। লিফটে আগে উঠিনি। তাই ভরসা করিনি। শিখে নিয়েছি। পরেরদিন থেকে লিফটে যাব।”

[আরও পড়ুন: SKOCH Award: বাংলার মুকুটে নতুন পালক, আরও দুটি স্কচ পুরস্কার এল রাজ্যে]

ছেলে যখন তিনতলায় ক্লাস করছে বাইরে তখন গাছের নিচে অপেক্ষা করছেন মা রেবাদেবী। তিনি জানালেন, “ছেলে হাঁটতে পারে না বলে আমি ওঁকে ঘরে বসিয়ে রাখিনি। কোলে করে যেমন স্কুলে নিয়ে গিয়েছি তেমনি খেলার মাঠ কী জিনিস তা দেখিয়েছি ওকে। টানাটানির সংসারে থেকেও ওকে খবরের কাগজ পড়িয়েছি। টিভি দেখিয়েছি। আমি চাই ও একদিন এমনই কোথাও শিক্ষকতা করুক।” মায়ের ইচ্ছে ছড়িয়ে গিয়েছে একমাত্র ছেলে রোহিতের মধ্যে। স্মিত হেসে তাঁর জবাব, “এমএ শেষ করে পিএইচডি করব। শিক্ষক আমাকে হতেই হবে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement