shono
Advertisement

কাটা হাতে পাঁচ মেডিক‌্যালে ঘুরপাক কিশোরের, ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা

অবশেষে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভরতি জখম কিশোর।
Posted: 09:58 AM Dec 27, 2020Updated: 09:58 AM Dec 27, 2020

অভিরূপ দাস: কনুইয়ের তলা থেকে কাটা অংশটা ঝুলছে। চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। সেই হাত নিয়েই ঘুরতে হল এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল। তেরো বছরের মুমূর্ষু কিশোরকে (Teenager) ভরতি নিল না রাজ্যের পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল। সমস্ত জায়গা থেকে এল এক জবাব, “এখানে চিকিৎসা হবে না।” পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে শনিবার দুপুরে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভরতি হয়েছে বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা গৌতম মাল। পরপর পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল সংকটজনক রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে।

Advertisement

শুক্রবার সকালের ঘটনা। ধানকল যন্ত্রে হাত ঢুকে যায় বীরভূমের (Birbhum) মুরারইয়ের বাসিন্দা ১৩ বছরের ওই কিশোরের। বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে কিশোর। ওই অবস্থাতেই গুরুতর আহত গৌতমকে নিয়ে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে যায় তার পরিবার। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, এই ধরনের গুরুতর আঘাতের চিকিৎসা করতে যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন তা এখানে নেই। দ্রুত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয় কিশোরের মা-বাবা। সেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়।

গৌতমের মা জানিয়েছেন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে আমাদের জানানো হয়, এই ধরণের হাত ঠিক করতে অত্যাধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন। কলকাতার এসএসকেএমে (SSKM Hospital) এর চিকিৎসা হয়। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সে করে ১০৮ কিলোমিটার উজিয়ে আহত কিশোরকে এসএসকেএমে আনা হয়। অভিযোগ, গৌতমের পরিবারকে এসএসকেএম-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে বেড নেই। ওই কিশোরের পরিবারের দাবি, “আমরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করি। যন্ত্রণায় ছটফট করছিল গৌতম।” 

[আরও পড়ুন: ‘সবাই আগের জীবনে ফিরে যাবো’, নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে ৯.৫ লক্ষ পড়ুয়াকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর]

বহুবার কাকুতি মিনতি করা হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বেডের বন্দোবস্ত হয়নি। যন্ত্রণায় এলিয়ে পড়েছিল গৌতম। এভাবে ফেলে রাখা বিপজ্জনক। কিশোরের পরিবার তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পরের গন্তব্য নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ (NRS Medical College & Hospital)। যেখানে এমার্জেন্সি বিভাগে আহত কিশোরের পরিবারকে জানানো হয়, তাদের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগই নেই! অগত্যা ফের রোগীকে এসএসকেএম-এ নিয়ে আসতে হয়। এভাবেই কাটে বড়দিনের রাত। রাত গড়িয়ে সকাল হয়েও জোটেনি বেড। অবশেষে শনিবার দুপুরে কিশোরকে নিয়ে তার পরিবার আসে আরজি কর হাসপাতালে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. প্রবীর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সকাল ১১টা নাগাদ ট্রমা কেয়ার ইউনিটে আসে ওই কিশোর। দ্রুত তাকে ভরতি নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, শুক্রবার সকাল ন’টা থেকে শনিবার দুপুর ১১টা, টানা ২৬ ঘণ্টা পর আদৌ কি জোড়া লাগানো যাবে ওই হাত? সূত্রের খবর, কিশোরের হাতটি বাদ গেলেও তার প্রাণের যাতে কোনও সংশয় না হয় তার চেষ্টাই চালাচ্ছেন আরজিকর হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কিশোরের পরিবারের আক্ষেপ রাজ্যের অন্যতম সেরা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম দ্রুত ব্যবস্থা নিলে, হয়তো জুড়ে দেওয়া যেত ওই ছিন্নবিচ্ছিন্ন হাত। পাঁচ হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ার খবর পৌঁছেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছেও। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, কেন দ্রুত ওই কিশোরকে চিকিৎসা দেওয়া হল না তা জানতে চাওয়া হবে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের কাছে। সচিব জানিয়েছেন, ওই কিশোরকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

[আরও পড়ুন: সুদীপ্ত সেনের চিঠি বয়ান হিসেবে গ্রহণ করল আদালত, সার্টিফায়েড কপি হাতে পেলেন কুণাল ঘোষ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement