স্টাফ রিপোর্টার : ব্যস্ত সময়ে এক্সাইড ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন বৃদ্ধা। মন্থর গতিতে রাস্তা পার হওয়ার সময়ই সবুজ হয়ে যায় সিগন্যাল। কিন্তু এক ট্রাফিক পুলিশকর্মীই তাঁকে ধরে নিয়ে তুললেন ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’এ (Refuge Island)। তাঁর দু’পাশ দিয়ে গতিতে যান চলাচল করলেও অক্ষত রইলেন বৃদ্ধা। একই দৃশ্য মধ্য কলকাতার ডোরিনা ক্রসিং বা উত্তর কলকাতার মহাত্মা গান্ধী রোড ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ক্রসিং, গিরিশ পার্ক, শ্যামপুকুর স্ট্রিট ও যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউ ক্রসিং সহ বেশ কিছু রাস্তায়।
কলকাতার ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মোড় বা ক্রসিংয়ে যেন ‘এক টুকরো দ্বীপ’। তার পোশাকি নাম ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’। অনেকে আবার একে ‘পেডেস্ট্রিয়ান রিফিউজ’ (Pedestrian Refuge) অথবা ‘পেডেস্ট্রিয়ান আইল্যান্ড’ও বলে থাকেন। শহরের প্রবীণ, স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও বিশেষভাবে সক্ষমদের কথা মাথায় রেখেই হচ্ছে পরিকল্পনা। দুর্ঘর্টনার সংখ্যা কমাতে কলকাতায় ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’এর সংখ্যা বাড়াচ্ছে লালবাজার। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাস্তায় ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’ রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাফিক বিভাগের কর্তা ও আধিকারিকদের সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের বৈঠকে উঠে আসে ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’এর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ।
[আরও পড়ুন: কমিটি গঠনের নির্বাচনে তুমুল অশান্তি! অনিশ্চয়তার মুখে বাগবাজার সার্বজনীনের পুজো]
লালবাজারের (Lalbazar) ট্রাফিক বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৯৬ জনের। এর মধ্যে ৭২ জনের বয়স ৫০-এর উপর। ৫৮ জন পুরুষ ও ১৪ জন মহিলার মধ্যে একটি বড় অংশ শহরের প্রবীণ ও প্রবীণা। আবার দুর্ঘটনায় এই বয়সের মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন, এমন সংখ্যা ২২৫। অল্প আহতের সংখ্যা ৬০।
বিভিন্ন দুর্ঘটনার পর তদন্ত করে ট্রাফিক আধিকারিকরা দেখেছেন, এই মৃত ও আহত প্রবীণদের মধ্যে একাংশ পথচারীও। ট্রাফিকের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে যে, ধীর বা মন্থর গতিতে রাস্তা পার হওয়ার সময় তাঁদের উপর এসে পড়েছে বেপরোয়া গাড়ি। গাড়ির ধাক্কায় কখনও তাঁরা ছিটকে গিয়েছেন। কখনও বা তাঁদের পিষে দিয়েছে চাকা। তদন্ত করে ট্রাফিক বিভাগ দেখেছে, লাল সিগন্যাল বন্ধ ও সবুজ সিগন্যাল চালু হওয়ার সময়ও অনেকে রাস্তা পার হন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা অল্প বয়সের, তাঁরা দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে যান। কিন্তু বিপদে পড়েন প্রবীণ বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। তাঁদের সামনে এসে পড়ে গাড়ি। অথবা, এমনও দেখা গিয়েছে যে, একদিকের রাস্তা পার হয়ে মাঝখানে পৌঁছে তাঁরা আর অন্যদিকের রাস্তা পার হতে পারছেন না।
[আরও পড়ুন: এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকাকে তলব ইডির, আদালতের দ্বারস্থ মেনকা গম্ভীর]
রাস্তার মাঝখানে এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন যে, দুর্ঘটনার কবলে পড়ার সম্ভাবনাও রয়ে গিয়েছে। সেখানে ব্যস্ত রাস্তার ক্রসিংগুলিতে ‘এক টুকরো দ্বীপ’ বা ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’ থাকলে রাস্তা পার হওয়ার সময় সুবিধা হয় পথচারীদের। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কলকাতার ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’-গুলি যাতে পথচারীরা ব্যবহার করেন, সেই ব্যাপারে ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক পুলিশ জোর দিচ্ছে। আবার নতুন করে কোন কোন রাস্তায় ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’ তৈরি করা যায়, সেই তালিকাও তৈরি করছে ট্রাফিক গার্ডগুলি। সম্প্রতি সাউথ ট্রাফিক গার্ডের তরফ থেকে এক্সাইড মোড়, ডোরিনা ক্রসিংয়ে ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’ তৈরি করা হয়েছে। পুজোর আগেই কলকাতায় আরও কিছু ‘রিফিউজ আইল্যান্ড’ তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।