ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আসানসোলে শুভেন্দু অধিকারীর কম্বল বিতরণী কর্মসূচিতে প্রাণহানির ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই ঘটনায় দায়ী কে, তা নিয়ে চলছে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। এবার আসানসোলের দুর্ঘটনার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে দায়ী করলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। শুভেন্দু অধিকারীর গ্রেপ্তারির দাবিতে এককাট্টা রাজ্যের শাসকদল।
কুণাল বলেন, “পুলিশ ওইটুকু জায়গায় অনুমতি দেয়নি। বড় জায়গায় করতে বলেছিল। কেউ যোগাযোগ করেনি। মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তৃণমূলের নেতারা মানুষকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন।” সাংবাদিক বৈঠকের মাঝে এরপর শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের একটি ভিডিও দেখিয়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে বেনজির আক্রমণ করেন তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, “শুভেন্দু পুলিশকে হুমকি দিচ্ছে। আর আপনি বিচারপতি মান্থা নিরাপত্তা দিচ্ছেন। কালকের ঘটনার দায়িত্ব আপনাকেও নিতে হবে। ওর অবচেতনে বিচারপতি মান্থার রক্ষাকবচ কাজ করছে। আচমকা যদি কোনও ঘটনা ঘটে, তার জন্য আদালতের অপেক্ষায় থাকতে হবে? সুপ্রিম কোর্টে সিরিজ অফ অর্ডার আছে, আদালত কোনও তদন্তের উপর হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু মনিটর করতে পারে। মান্থার সুরক্ষাবলয় পক্ষপাতদুষ্ট। ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।” শুভেন্দুর গ্রেপ্তারিরও দাবি জানান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, “শুভেন্দু আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা মানুষকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গিয়েছে। কম্বল দেখিয়ে লোক এনেছিল। উদ্ধার কাজে গেল না কেন? একটাও অ্যাম্বুল্যান্স ছিল না কেন? দায়িত্বজ্ঞানহীন। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।”
[আরও পড়ুন: লালন শেখের ‘রহস্যমৃত্যু’: সিবিআইকে রিপোর্ট জমার সময়সীমা বেঁধে দিল হাই কোর্ট]
উল্লেখ্য, আসানসোল কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে খুবই স্বল্প পরিসরে এদিন ‘শিবচর্চা’ নামে কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী কাউন্সিলর চৈতালী তিওয়ারি। শুভেন্দু ভাষণ শেষে প্রতীকী কম্বল বিতরণ করে চলে যাওয়ার পরই চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। সভায় কম্বল দেওয়ার কথা ছিল ৫ হাজার। খোলা হয় ৫টি কাউন্টার। কিন্তু সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও শীতবস্ত্র নিতে আসা হাজার হাজার মানুষের শৃঙ্খলা রাখতে কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। চরম বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে দুই মহিলা ও এক কিশোরী-সহ তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃত ঝালি বাউড়ি কাল্লা (৫১) , চাঁদমণি দেবী (৫০) ও প্রীতি সিং (১৩) আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙালের বাসিন্দা। আশঙ্কাজনক হয়ে হাসপাতালে ভরতি আরও সাতজন।
কার গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিকের নেতৃত্বে চলবে তদন্ত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে ওই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তদন্ত চলার সময় ঘটনাস্থল বাঁশের ব্যারিকেড করে ঘেরা থাকবে।