সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: এবার ট্যাব সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পড়ুয়া নিজেই পোর্টালে আপলোড করবে। তথ্য ঠিকমতো আপলোড হল কি না, তা যাচাই করার পথও খোলা থাকছে পড়ুয়াদের সামনে। ট্যাবের টাকা গায়েবের ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা খর্ব করে এমনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নবান্ন। গত দুদিনে ট্যাবের টাকা গায়েব হওয়ার ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারকে। এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)।
প্রয়াত নাট্যকার মনোজ মিত্রের গার্ড অব অনার অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এদিন সরকারি পোর্টালের সুরক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, বাইরের দু-একজন রয়েছে। পোর্টাল হ্যাক করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার বা এনআইসি-কে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এনআইসি ইতিমধ্যেই একটা এসওপি তৈরি করেছে এবং কোন কোন হ্যাকার এই কারচুপির সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করেছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ ব্রাত্য বসুর দাবি, ‘‘এই অসাধু কাজের সঙ্গে যুক্ত কেউ ছাড় পাবে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।’’
উল্লেখ্য, ট্যাব কেলেঙ্কারিতে প্রথম গ্রেপ্তার বর্ধমান জেলা পুলিশের। সোমবার মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকার খুদিটোলা থেকে হাসান আলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলার ২৭টি স্কুলের মোট ৮৫ জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যায়। পুলিশ তদন্তে নেমে মালদহ থেকে এই হাসান আলিকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ সূত্রের খবর, কম্পিউটারে ডিপ্লোমা পাস করেছে হাসান। সে ডেটা-এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করত। অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে ট্যাবের বরাদ্দ দশ হাজার টাকা অন্য অ্যাকাউন্ট নম্বরে স্থানান্তরিত করে টাকা গায়েব করার অভিযোগে তিন যুবককে উত্তর দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করল পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ। এদিকে, এদিনও ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। মুর্শিদাবাদের সালার থানা এলাকায় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির স্কুল পড়ুয়াদের জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া ট্যাবের টাকা চলে গেল বিহারের কিষাণগঞ্জের অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। আর এই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল মুর্শিদাবাদের সালার থানা এলাকার টিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শান্তিসুধা দাস উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ দায়ের করেছেন পুলিশের কাছে।
এতদিন পড়ুয়াদের এই সংক্রান্ত তথ্য আপলোড ও যাচাইয়ের ক্ষমতা ছিল শুধু প্রধান শিক্ষকদের হাতে। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যে তিনশোরও বেশি ক্ষেত্রে টাকা গায়েবের অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ যাদের পাওয়ার কথা তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা না ঢুকে অন্য কারও কাছে চলে গিয়েছে। কোথাও আবার একই পড়ুয়ার কাছে দুবার ঢুকেছে ট্যাবের টাকা। ভিনরাজ্যে টাকা চলে যাওয়ার খবরও এসেছে। সবটাই তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে সোমবারই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ট্যাব নিয়ে নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, শিক্ষা সচিব ছিলেন। আর ছিলেন পাঁচ জেলার শিক্ষা আধিকারিকরা। কালকের বৈঠকেই মুখ্যসচিব পুলিশ ও শিক্ষা দপ্তরকে বেশ কয়েকদফা নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুলিশকে বলেছিলেন, প্রতিটা কেস ধরে ধরে তদন্ত করে গরমিলের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে দোষীদের। এই ভুল ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষকদের তদন্তের আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষদপ্তরকে বলা হয়েছে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে। রাজ্যের মনোভাব আঁচ করে প্রধান শিক্ষকদের একটু সংগঠন ট্যাবের আপলোড সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে প্রধান শিক্ষকদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও তুলতে শুরু করে। এই আবহেই প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা খর্ব করে সরাসরি পড়ুয়াদের হাতেই তথ্য আপলোডের ভার অর্পণ করল নবান্ন। অর্থাৎ এবার ভুল হলে সেই দায় সরাসরি পড়ুয়ার উপরই বর্তাবে। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। নিজেদের অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে শুরু করে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য পুরোটাই আপলোড করার ক্ষমতা থাকবে পড়ুয়াদের হাতে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে রাজ্যের তথ্য প্রযুক্তি দপ্তর ও স্কুল শিক্ষা দপ্তর যৌথভাবে কাজ করবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।