ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: গুজরাটে (Gujarat) ভোটের আগে চমকপ্রদ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। প্রতিবেশী তিন দেশের অ-মুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই ঘোষণা নিয়ে যথারীতি রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতারা। বিরোধীদের অধিকাংশের দাবি, গুজরাটে সদ্য ঘটে যাওয়া সেতু বিপর্যয় (Morbi Bridge Collapse) থেকে নজর ঘোরাতে এটা নির্বাচনী চমক। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বঙ্গ রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। এনিয়ে রাজ্যের শাসকদলের প্রতিক্রিয়া, এ ব্যাপারে তৃণমূল (TMC) ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার মনে করে, যাঁরা ভোট দিয়ে এদেশের সরকার নির্বাচিত করে, তাঁরা সকলেই নাগরিক। তাদের সেই নীতির বদল হবে না।
মঙ্গলবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান (Pakistan) ও আফগানিস্তান (Afghanistan) থেকে আসা হিন্দু, পারসি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই মর্মে গুজরাটের মেহসানা ও আনন্দ জেলায় বসবাসকারী অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। ‘নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫’-এর আওতায় এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা CAA’র প্রয়োগ না করে ঘুরিয়ে এই নাগরিকত্ব প্রদান করা হল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এমনকী বঙ্গের বিজেপি (BJP) নেতাদেরও একই মত।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব, বড় পদক্ষেপ কেন্দ্রের]
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) জানিয়েছেন, ‘‘CAA প্রয়োগ শুরু হল এইভাবে। এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে না। বাংলাতেও এভাবে CAA লাগু করা হবে। এতে মতুয়া, নমঃশুদ্ররা সুবিধা পাবেন।’’ তাঁকে বিঁধে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) দাবি, ”মতুয়ারা এখানকার ভোটার। তাঁদের কাছেও নাগরিকের সমস্ত নথিপত্র আছে। আলাদা করে কী সুবিধা পাবেন? আসলে গুজরাটে যে এত বড় সেতু বিপর্যয় ঘটে গেল, তাতে তো যথেচ্ছ দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেসব থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরানোর চেষ্টায় ভোটের আগে এই ঘোষণা।” তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের (Santanu Sen) দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের চেষ্টা চলছে। একই মত কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীরও (Adhir Ranjan Chowdhury)।
[আরও পড়ুন: চলে গেলেন ভারতের ‘স্টিল ম্যান’, ৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত শিল্পপতি জামশেদ ইরানি]
উল্লেখ্য, নাগরিকপঞ্জি (NRC) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিয়ে বরাবর সরব বাংলার বুদ্ধিজীবী মহল। আসলে ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদ হয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু পালটা গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, মুসলিম দেশগুলিতে অত্যাচারিত হিন্দু, শিখ ও অন্য সংখ্যালঘুদের বাঁচাতেই এই আইন আনা হয়েছে। এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, কেড়ে নেওয়ার নয়।