গোবিন্দ রায়: কোনও অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না। যাঁরা মিছিলে অংশ নেবেন, তাঁদের পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। একাধিক নির্দেশ দিয়ে হাওড়ায় অঞ্জনী পুত্র সেনা এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আজ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। সেখানেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মিছিলের অনুমতি দিলেও দুই মিছিল আলাদা সময়ে হবে। এছাড়াও মিছিলের লোকসংখ্যাও বেঁধে দিলেন বিচারপতি।
রামনবমী নিয়ে ক্রমে উত্তাপ বাড়ছে রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপি নেতারা রামনবমী পালনের জন্য জোর প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করার প্রস্তুতিও চলছে। রামনবমী ঘিরে রাজ্যে অশান্তি ছড়াতে পারে। নবান্নের থেকে সেই বিষয়ে আগাম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ রাস্তায় নেমে কড়া নজরদারিও শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় মিছিলের অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। হাওড়ায় রামনবমীর দিন মিছিল করতে চেয়েছে অঞ্জনী পুত্র সেনা এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেজন্য কলকাতা হাই কোর্টে দ্বারস্থ হয় দুই সংগঠন।
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে এদিন সেই মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে একাধিক বক্তব্য রাখেন বিচারপতির। একাধিক শর্তসাপেক্ষে দুই মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল। অঞ্জনী পুত্র সেনা ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পৃথকভাবে ওই মিছিল করবে। সেক্ষেত্রে ওইদিন আলাদা সময়ে দুটি মিছিল করা হবে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মিছিল করবে অঞ্জনী পুত্র সেনা। অন্যদিকে, বিকাল তিনটে থেকে ছটা পর্যন্ত মিছিল করার অনুমতি পেয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তবে দুটি মিছিলেই পাঁচশো জনের বেশি লোক থাকতে পারবে না। দুই মিছিল মলিয়ে মোট হাজার জন থাকতে পারবেন বলে নির্দেশ আদালতের। পৃথক রাস্তায় দুই মিছিল হবে। সব থেকে বড় বিষয়, কোনও মিছিলেই অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। এই কড়া নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পিভিসি দিয়ে তৈরি যে কোনও ধর্মীয় প্রতীক নিয়ে মিছিল করা যাবে। ধাতুর তৈরি কোনও হাতিয়ার নিয়ে মিছিল করা যাবে না।
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের প্রশ্ন, "দুর্গাপুজোয় কোথাও গন্ডগোল হলে কি দুর্গাপুজো কি বন্ধ করে দেব?" তাঁর মন্তব্য, "ক্ষমতা থাকা এবং ক্ষমতার প্রয়োগ করা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। কোনও এলাকা নিয়ে পুলিশ যদি আশঙ্কা প্রকাশ করে, তাহলে সেটা রাজ্যের পক্ষে ভালো দেখায় না।" এরপরেই বিচারপতির প্রশ্ন, "ওই এলাকায় কি প্রতিদিন গন্ডগোল হয়?" বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ আরও বলেন, "অশান্তি প্রতি বছর কমছে বলেই দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালে বেশি গন্ডগোল হয়েছিল। ২০২৩ সালে কমেছে, ২০২৪ সালে আরও কম হয়েছে। এবছর মানুষ আরও সচেতন হয়েছে বলে আশা করা যায়।" বিচারপতির আরও মন্তব্য, "যদি বন্ধ করতেই হয়, তাহলে সব কর্মসূচিই বন্ধ করে দেব। রাজনৈতিক হোক বা অরাজনৈতিক।"
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অতীতে হাওড়ায় রামনবমীতে মিছিলের সময় উত্তেজনা, সংঘর্ষ দেখা গিয়েছে। মিছিলের সময় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল এক যুবককে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা যায়, বিহার থেকে ওই যুবক হাওড়া এসেছিল। তাহলে কি রামনবমীরে বাইরের রাজ্য থেকে লোক আসছে বাংলায়? সেই প্রশ্ন উঠেছিল। এবারও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় আগাম অশান্তির আঁচ করে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন।