গোবিন্দ রায়: 'সুপ্রিম' রায়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ প্যানেল বাতিল হওয়ায় 'অযোগ্য'দের বেতন ফেরত দিতে হবে, ১২ শতাংশ সুদসমেত। সেই দুঃসংবাদ এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি তোলপাড় ফেলেছে। এর মাঝে সোমবারই জিটিএ-তে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বড়সড় পদক্ষেপ নিল কলকাতা হাই কোর্ট। দুর্নীতিতে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও ৩১৩ জন শিক্ষককে কেন এখনও বেতন দেওয়া হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলে বিচারপতির কড়া নির্দেশ, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের বেতন বন্ধ করে দিতে হবে। এনিয়ে পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার।
রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মাঝেই ২০২৪ সালে পাহাড়ের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা জিটিএ-তে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেখানেও বেআইনিভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে বলে কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হয় মামলা। তদন্তভার যায় সিআইডি-র হাতে। সোমবার সেই মামলায় সিআইডি স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেয় উচ্চ আদালতে। তা দেখেই বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু রীতিমতো খেপে যান। ভর্ৎসনার সুরে বলেন, ''এক্ষুনি এই শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া উচিত। রাজ্য কেন এদের বেতনের ভার বহন করবে?'' তাঁর আরও মন্তব্য, ''এই শিক্ষকদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ রয়েছে, কিন্তু এঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? জিটিএ এখন যদি বলে, এঁদের পরিবার ও শিশুদের কথা চিন্তা করতে, তাহলে বাকি শিশুরাও তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।''
উল্লেখ্য, এই দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দপ্তর একটি এফআইআর দায়ের হয়। তার ভিত্তিতে বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে মামলা রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র হাতে যায়। নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, জিটিএ-র নেতা বিনয় তামাংদের। সোমবার মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী অভিযোগ তোলেন, তদন্তে গড়িমসি করছে সিআইডি। এরপর বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, বেআইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন জিটিএ-র ৩১৩ জন শিক্ষককে কেন এখনও বেতন দেওয়া হচ্ছে? ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা বন্ধ করা হোক। এটাই রাজ্যের কাছে শেষ সুযোগ। বৃহস্পতিবার মামলার পরবর্তী শুনানি। ওইদিন আদালতের নির্দেশের পর কী পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার, তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।