রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayet Vote) দামামা কার্যত বেজে যাবে। হাতে সময়ও কয়েকমাস। কিন্তু নিচু তলায় লড়াই করার কর্মী কোথায়? কেন বুথে বুথে কমিটি তৈরির কাজ এগোচ্ছে না? বৈঠকের প্রথম দিনে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে খামতি দেখে ক্ষুব্ধ বঙ্গ বিজেপির (BJP) দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের বিধায়ক-সাংসদরা আরও বেশি করে এলাকায় জনসংযোগ গড়ে তুলুক। বুথে বুথে যান। না হলে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, বুথ কমিটি না থাকলে সেখানে প্রার্থী দেওয়াও সম্ভব হবে না। যত বেশি বুথ কমিটি, তত বেশি মনোনয়ন দেওয়া যাবে। এমনটাই মনে করছেন শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।
পঞ্চায়েত ভোটে বাইক বাহিনী প্রস্তুত রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। এদিকে, বাছাই করা ২৪টি লোকসভা আসন ও তার অন্তর্গত বিধানসভাগুলিতে এখনও কমিটি তৈরির কাজও শেষ হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক (Central Observer)সুনীল বনসল রবিবার রাজ্য নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হচ্ছে না বলে কারও ঘাড়ে দোষ চাপালে হবে না। কোনও অজুহাত নয়। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে দু’দিনের এই বৈঠকে দলের রণকৌশল চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে। ১৫ দিন পরপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যে আসবেন। লোকসভা এলাকায় রাত্রিবাস করবেন তাঁরা। ২০২৪ এর লোকসভার আগে পর্যন্ত বাংলায় নিয়মিত আসবেন ধর্মেন্দ্র প্রধান ও স্মৃতি ইরানিরা। এদিকে, বিভিন্ন লোকসভার আহ্বায়করা দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছেন না বলেও এদিন সুনীল বনসলের কাছে নালিশ করেছেন দলের একাংশ।
[আরও পড়ুন: ‘গরিবের দরজায় পৌঁছে যাবে ব্যাংক’, দেশে ৭৫টি ডিজিটাল ব্যাংকিং ইউনিটের উদ্বোধন মোদির]
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল প্রার্থী খোঁজার জন্য রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এমন প্রার্থী দেখতে হবে। যদিও দলের একাংশের কথায়, অধিকাংশ বুথে সংগঠন নেই। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে আদৌ কত আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাশাপাশি বেশি করে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রচার করতে হবে। সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়ে তৃণমূল সরকার বিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি দলই নিজেদের মতো ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। দেরিতে হলেও আসরে নেমেছে বিজেপি। আর তাই দু’দিন হেস্টিংস কার্যালয়ের বৈঠক থেকে কোন্দল কাঁটা সামলে দলকে সংগঠিত করে এগোতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। একুশের বিধানসভা ভোটে স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পর একাধিক নির্বাচনে ধাক্কা খেতে হচ্ছে বঙ্গের গেরুয়া শিবিরকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত দল। পাশাপাশি তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে এঁটে উঠতে পারছে না বিজেপি। একশো দিনের কাজের টাকা আটকে তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে তারা। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখাপেক্ষী, কখনও বা কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভরসায় রয়েছেন এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের বড় অংশ। অমিত শাহ, জে পি নাড্ডারা রাজ্য নেতাদের আগেই বলে দিয়েছেন, দিল্লির ভরসায় না থেকে স্বাবলম্বী হতে হবে। কিন্তু বুথে সংগঠনের যে অবস্থা সামনে এসেছে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। শুধু খাতায়-কলমে সংগঠন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোন্দল মিটিয়ে নেতা কর্মীদের স্বাবলম্বী কতটা করে তোলা যাবে তা নিয়ে শীর্ষ নেতারাও সন্দিহান।
[আরও পড়ুন: নেহরুর মতো মহান ব্যক্তিকে নিয়ে এত মিথ্যাচার…! কান্নায় ভেঙে পড়লেন মহাত্মা গান্ধীর পৌত্র]
এই পরিস্থিতিতেই রবিবার আলাদাভাবে কয়েক দফায় বৈঠকে সংগঠন মজবুত করতে একাধিক দাওয়াই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডেরা। বৈঠকে দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী চৌধুরী, সৌমিত্র খাঁ, জগন্নাথ সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তী থাকলেও ছিলেন না রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। অন্যদিকে আবার, দ্বন্দ্বের কারণে, দলের রাজ্য সহ-সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে বৈঠকে আমন্ত্রণই করা হয়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ দলের একাংশের।
এদিকে পঞ্চায়েত ভোটের আগেও CAA ইস্যুকে ফের অস্ত্র হিসেবে ভোটব্যাংকের জন্য বিজেপি যে ব্যবহার করতে চায় তা এদিন স্পষ্ট হয়েছে সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বক্তব্যে। সংবাদ মাধ্যমের সামনে জগন্নাথ সরকার বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি সিএএ হবে। শুধু সিএএ নয়, আমারা এনআরসি করারও দাবি তুলেছি। আশা করি সেটাও হবে। কয়েকটি রাজ্যের প্রতিবাদের জেরে সিএএ পিছিয়ে গিয়েছে।” দলের পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটির আহবায়ক জগন্নাথ সরকার জানান, “আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি বুথ কমিটি এবং পরিচ্ছন্ন প্রার্থীর ওপর। সেইসঙ্গে রিগিং রুখতে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনাও আছে।”