অর্ণব আইচ: ডিজিটাল গ্রেপ্তারির নামে সাইবার জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ডরা চিনে। চিনে বসেই ওই সাইবার জালিয়াতরা তাদের ভারতীয় ডিজিটাল গ্রেপ্তারির সাগরেদদের সাহায্যে বিপুল টাকার জালিয়াতি চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে, এমনই অভিযোগ সিবিআইয়ের। তবে সিবিআই শুধু চিনকেই কাঠগড়ায় তোলেনি। তার সঙ্গে সিবিআইয়ের অভিযোগের আঙুল কম্বোডিয়া ও হংকংয়ের দিকেও। ডিজিটাল গ্রেপ্তারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ এই দেশগুলি থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সিবিআইয়ের পক্ষে এমনই অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল গ্রেপ্তারির নামে সাইবার জালিয়াতি ঘটেই চলেছে। নিজেদের কখনও বা মুম্বই পুলিশ, কখনও বা সিবিআই বা অন্য তদন্তকারী সংস্থার নাম করে ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়ে তাঁদের ঘরবন্দি করে রেখে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিপুল টাকা। গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গার দশটি ডিজিটাল গ্রেপ্তারির নামে সাইবার জালিয়াতির ঘটনাকে বেছে নিয়ে তদন্ত চালানো হয়।
তারই ভিত্তিতে মাস দু'য়েক আগে এই রাজ্য ছাড়াও দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাত ও কেরলের বিভিন্ন জায়গায় সিবিআই আধিকারিকরা তল্লাশি চালান। বহু বৈদ্যুতিন ডিভাইস, মোবাইল, ল্যাপটপ, ব্যাঙ্কের নথি আটক করা হয়। এই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনজনকে সিবিআই গ্রেপ্তারও করে। তারা এখন জেল হেফাজতে রয়েছে। সম্প্রতি ডিজিটাল গ্রেপ্তারির নামে সাইবার জালিয়াতির অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, এই সাইবার জালিয়াতিতে আরও ষড়যন্ত্রকারী, সাহায্যকারী, মিউল অ্যাকাউন্ট বা ভাড়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রক ও বিদেশ থেকে যারা পুরো সাইবার অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে।
সিবিআই জানিয়েছে, তদন্ত চলাকালীন সাইবার জালিয়াতি তথা সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ১৫ হাজার মোবাইল ও ল্যাপটপ এবং সেগুলির আইপি অ্যাড্রেস পরীক্ষা করা হয়। তাতেই সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, দেশে ডিজিটাল গ্রেপ্তারির মতো সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বিদেশের মাস্টারমাইন্ডরা। চিন, কম্বোডিয়াও হংকংয়ে রয়েছে এই সাইবার অপরাধগুলির মাস্টারমাইন্ড তথা নাটের গুরুরা। বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সাইবার অপরাধীরা যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে টাকা পাঠায়, সেগুলি থেকে শুরু করে পুরো অপরাধের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে ওই বিদেশি মাস্টারমাইন্ডরা।
এই ১৫ হাজার আইপি অ্যাড্রেসগুলি পরীক্ষা করার পর এই দেশের আইপি অ্যাড্রেসগুলি 'ছেঁকে' নেওয়া হয়। তার মাধ্যমেই ওই বিদেশি সাইবার অপরাধীদের ভারতীয় সাগরেদদের সন্ধান চালায় সিবিআই। আবার এই দেশ থেকে বিদেশে চাকরির টোপ দিয়ে বহু যুবককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মায়ানমারে। মায়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হওয়া বেআইনি কল সেন্টার থেকে ফোন করে বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দাদের ফোন করে টাকা হাতিয়ে নেয় জালিয়াতরা।
হাতিয়ে নেওয়া টাকা কীভাবে ও কোন পথে চিন, কম্বোডিয়া বা হংকংয়ের মাস্টারমাইন্ডদের কাছে পাচার হয়েছে, কীভাবে ভিওআইপিকে কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করছে, সেই ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
