shono
Advertisement

নেপাল সীমান্ত দিয়ে করোনা আক্রান্ত ঢোকানোর ষড়যন্ত্র, অনুপ্রবেশ রুখতে বাড়ল নজরদারি

সীমান্ত নিয়ে কেন্দ্রকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। The post নেপাল সীমান্ত দিয়ে করোনা আক্রান্ত ঢোকানোর ষড়যন্ত্র, অনুপ্রবেশ রুখতে বাড়ল নজরদারি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:52 PM Apr 12, 2020Updated: 12:52 PM Apr 12, 2020

গৌতম ব্রহ্ম ও অর্ণব আইচ: পড়শি রাষ্ট্র থেকে কোভিড-১৯ (COVID-19) পজিটিভ কিছু মানুষকে ভারতে ঢুকিয়ে এ দেশে করোনা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এ ব্যাপারে নেপাল সীমান্তবর্তী বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে সুরক্ষা বল (এসএসবি)-এর পাঠানো রিপোর্টের জেরে সিল করা হল নেপাল ও বাংলাদেশ সীমান্ত। রিপোর্টটি শনিবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ প্রকাশিত হয়েছে। তারপরই সীমান্ত নিয়ে কেন্দ্রকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে বলেন, “সীমান্ত পেরিয়ে বাইরে থেকে কিছু লোক ঢোকার চেষ্টা করছে। বাংলা বিপদে পড়লে কিন্তু বিপন্ন হবে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত।”

Advertisement

এসএসবি-র হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে শুক্রবারই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও নেপালের সীমান্ত সিল করে দেয় এসএসবি এবং বিএসএফ। উল্লেখ্য, নেপাল সীমান্তে পানটোকার রামগারোয়ার মোতায়েন এসএসবি-র সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত প্রায় আড়াইশোজনকে কয়েক দফায় নেপাল সীমান্ত পার করিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকানোর চক্রান্ত চলছে। সম্ভাব্য সেই ‘জীবাণু-সন্ত্রাসী’দের মধ্যে রয়েছে কয়েকজন পাকিস্তানিও। তাদের লক্ষ্য, ভারতের প্রান্তে প্রান্তে নোভেল করোনা ছড়িয়ে দেওয়া। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাইয়ে তাদের পাঠানো হবে, যার দরুন বর্ডার চেকপোস্টে দেহ পরীক্ষায় জ্বর ধরা পড়বে না।

বিএসএফের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, রিপোর্টটি তাঁদের হাতেও এসেছে। নেপাল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ ব্যর্থ হলে শত্রুরা বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বা উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢুকতে পারে। যে কারণে বাংলাদেশ সীমান্তও সিল করা হয়েছে। ডিআইজি (বিএসএফ) সুরজিৎ সিং গুলেরিয়া জানান, করোনা নিয়ে দিল্লি আগেই হুঁশিয়ার করেছিল। তারপর এসএসবি-র রিপোর্ট পেয়ে কোনও ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীকে সতর্ক করে জানানো হয়েছে, বাইরের কোনও লোককে যেন আশ্রয় না দেন। গ্রামে-গঞ্জে অচেনা মুখ দেখলে তৎক্ষণাৎ যেন বিএসএফ-কে খবর দেওয়া হয়।

[আরও পড়ুন: করোনা আবহে ২০০০ টাকা করে সাহায্য পেয়েছেন প্রায় সাত কোটি কৃষক! দাবি কেন্দ্রের]

শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে অমিত শাহও ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, “আপনাদের বিএসএফ রয়েছে, সিআইএসএফ রয়েছে। তাদের সঙ্গে মিটিং করুন। বাংলার তিনদিকে সীমান্ত- নেপাল, বাংলাদেশ আর ভূটান। ভিতরের দিকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড। বাইরের লোক ঢুকলে বাংলা বিপদে পড়বে। বিপন্ন হবে ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ।”

বস্তুত গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির আশঙ্কা, আত্মঘাতী জঙ্গিবাহিনীর আদলে তৈরি এই করোনাবাহী সন্ত্রাসীদের টার্গেট হতে পারে সেনা ছাউনিও। উত্তরবঙ্গের সেনা গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা জানান, এসএসবি-র রিপোর্ট পেয়ে সেনা কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি থেকে শুরু করে একদিকে মিরিকের রাস্তা, অন্যদিকে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু যাওয়ার অনেকটা পথ জুড়েই নেপাল সীমান্ত। সেখানে দু’দেশের মানুষের মধ্যে অবাধ যাতায়াত।
অনেক সময়ই পাহাড়ি এলাকায় নজর রাখা সহজ হয় না। জীবাণু-জঙ্গিরা তার মওকা নিয়ে এদেশে সেঁধিয়ে যেতে পারে। তাই নজরদারিতে একতিল খামতি রাখা হচ্ছে না। শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং ও দার্জিলিং যাওয়ার পথে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকা সেনা ঘাঁটির বুক চিরে চলে যাওয়া রাস্তায় বিস্তর অসামরিক যানও চলাচল করে। লকডাউনের দরুন এখন গাড়ি চলাচল কম হলেও প্রতিটি গাড়ি খুঁটিয়ে দেখে ছাড়া হচ্ছে। কোনও ব্যক্তি বা বাইক ফৌজি ক্যাম্পের গেটের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালে চলছে জেরা। তামাম তল্লাট জুড়ে টহলদারি দ্বিগুণ হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায়চৌধুরির মতামত চাওয়া হলে তিনি জানান, এসএসবি-র রিপোর্টটি যেন বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশও খুঁটিয়ে দেখে। কোনও বিদেশি শত্রু রোগ ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করেও থাকলে রোখার ক্ষমতা ভারতীয় সেনার রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হতে পারে অন্য জায়গায়। বহু সেনাকর্মী হয়তো এখন ছুটিতে রয়েছেন। যে অঞ্চল থেকে বেশি মানুষ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন, সেখানেও শত্রুরা হানা দিতে পারে। ছুটিতে থাকা সেনাকর্মী অথবা তাঁদের পরিবার-পরিজনদের সংক্রমিত করার চেষ্টা করতে পারে। আবার করোনায় আক্রান্ত হলে সেনাবাহিনীতে যোগদানে ইচ্ছুক তরুণরাও সমস্যায় পড়ে যাবেন। পুলিশ বা বিএসএফও জীবাণু-সন্ত্রাসীদের টার্গেট-তালিকা থেকে বাদ যাবে না। “তাই দেশের প্রতিটি নিরাপত্তাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। ক্যাম্পগুলোয় বাইরের লোকের যাতায়াত বন্ধ করাই উচিত।” মন্তব্য প্রাক্তন সেনাপ্রধানের।

[আরও পড়ুন: লকডাউনে গ্রাহকদের পাশে LIC, বাড়ানো হল প্রিমিয়াম দেওয়ার সময়সীমা]

এসএসবি রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সতর্ক হয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও। এক গোয়েন্দা আধিকারিকের কথায়, “এখন লকডাউন চলছে। তাই সীমান্ত পেরিয়ে কোনওভাবে করোনা রোগীরা এসে থাকলেও বেশি দূর যেতে পারবে না। তাই মূলত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গোয়েন্দা-নজরদারি চলছে।

The post নেপাল সীমান্ত দিয়ে করোনা আক্রান্ত ঢোকানোর ষড়যন্ত্র, অনুপ্রবেশ রুখতে বাড়ল নজরদারি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement