রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: কৃষক-খেতমজুর থেকে শুরু করে শ্রমিক, মেহনতি মানুষের থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছে সিপিএম। গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষের সরে ফলও যাওয়ার ভুগতে হচ্ছে 'মেহনতি মানুষ'-এর পার্টি বলে দাবি করা সিপিএম নেতাদের। তাই ছাব্বিশের নির্বাচনকে মাথায় রেখে জনসমর্থন বাড়াতে গ্রামবাংলায় বাড়তি নজর দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন। গ্রামে কৃষক-খেতমজুরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়ায় বসে তাঁদের দাবিদাওয়া জানার কৌশল নিয়েছে বঙ্গ সিপিএম। নিন্দুকদের কটাক্ষ, তাতেও কি শূন্যের গেরো কাটবে?

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্লোগান ছিল, ''কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ''। দলের কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের ব্যাখ্যা, বুদ্ধবাবুর এই স্লোগান ঠিক ছিল। কিন্তু তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু ভুল হয়েছিল। আর তাই সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় কৃষকসভার রিপোর্ট অগ্রাহ্য করার ভুল বর্তমানে আর হতে দিয়ে চায় না সিপিএমের রাজ্য নেতারা। সিপিএমের খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক তুষার ঘোষ বলেন, "গ্রামের গরিব মানুষ ছিল কমিউনিস্টদের ভিত্তি। তারা কিছুটা সরে গিয়েছে। কৃষক ও গ্রামের গরিব মানুষ ছিলেন কমিউনিস্টদের ভিত্তি। তাঁরা কিছুটা সরে গিয়েছে। কৃষক ও গ্রামীণ মানুষের আস্থা ফিরে পেতে আমরা দূরে আছি। আস্থা ফিরিয়ে আনতে গেলে লাগাতার আন্দোলনে থাকতে হবে। আন্দোলন চিহ্নিত করতে হবে ঘরে বসে নয়, গ্রামে-গ্রামে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে। খেতমজুরের দাওয়ায় বসে দাবিগুলি চিহ্নিত করতে হবে।"
শিল্প চাই - এই প্রয়োগ করতে গিয়ে জমি ইত্যাদি কিছু নিতে গিয়ে কিছু সমস্যা তো হয়েছে, মানছেন তুষারবাবু। কৃষক, খেতমজুর ও শ্রমিক সংগঠন সিটুর উপর আস্থা রেখে ইতিমধ্যে ব্রিগেড সমাবেশও ঘোষণা করেছে সিপিএম। ২০ এপ্রিল ব্রিগেডে সমাবেশের ডাক দিল সিটু, কৃষকসভা, খেতমজুর ইউনিয়ন ও বস্তি উন্নয়ন সমিতি। তার আগে রাজ্যব্যাপী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসজুড়ে হবে পদযাত্রা। বৈশাখের গরমে ব্রিগেড সমাবেশ, তাও দলের নামে নয়।
কেন দলের নামে দেখানোর সাহস বাংলায় ক্ষয়িষ্ণু শক্তি সিপিএম দেখাল না? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএম দাবি করে, তাদের দল মেহনতি মানুষের। কিন্তু সেই মেহনতী মানুষের দলে এখন কাস্তে ধরার লোকও মিলছে না। শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের অবস্থা খুবই খারাপ। গ্রামবাংলায় এই অংশের ভোট পাচ্ছে না লাল পার্টি। তাই কৃষক-শ্রমিক-খেতমজুরদের সংগঠিত করতেই এই ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে বঙ্গ সিপিএম। ইতিমধ্যে গ্রামসভার আদলে কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকী সভা শুরু হয়েছে, কিন্তু সমস্যা সেই একটাই - পেশা কৃষি হলেও পার্টি বৈঠকে আসতে রাজি নন তাঁরা। এমনকী, ব্রিগেড সভার প্রস্তুতি শুনেই তল্লাট ছাড়ছেন!