গর্ভাবস্থায় স্তন ক্যানসারের থাবা, কলকাতা মেডিক্যালে জটিল অস্ত্রোপচারে নয়া জীবন পেলেন তরুণী

02:13 PM Jul 28, 2021 |
Advertisement

অভিরূপ দাস: চরম আনন্দ আর সীমাহীন বিষাদ। দুই খবরই এসেছিল গায়ে গায়ে। পেটের মধ্যে নড়াচড়া করছে ভ্রুণ। আর বাঁদিকের স্তনে ডালপালা মেলেছে কর্কট রোগ (Cancer)। দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন সুমনা দাস (নাম পরিবর্তিত)। হাসপাতালের ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগ, গাইনোকোলজি বিভাগ যৌথভাবে তাঁকে দিল নতুন জীবন।

Advertisement

প্রথম যখন সুমনা কলকাতা মেডিক্যালে আসেন তখন তিনি দশ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা (Pregnant)। ২০২০ সালের সেই সময়টায় বাংলায় সংক্রমণ মারাত্মক। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে টালমাটাল বাংলা। স্তনের টিউমার পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন অসুখটা দুরারোগ্য কর্কট। টিউমারটা এমন ছিল সম্পূর্ণ স্তনটাই কেটে বাদ দিতে হত। এদিকে তক্ষুণি চিকিৎসা শুরু করলে ক্ষতি হতে পারত জঠরের সন্তানের। নাছোড়বান্দা তরুণী জানান, সন্তান চাই। অক্ষুণ্ণ চাই স্তনটাও। বুঝে শুনে পদক্ষেপ নেন চিকিৎসকরা। ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ধৃতিমান মৈত্র, হাসপাতালের টিউমার বোর্ডে পাঠান তরুণীকে। চিকিৎসকরা জানান, স্তন অক্ষুণ্ণ রাখতে গেলে কেমোথেরাপি অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু প্রেগন্যান্সির প্রথম ১৩ সপ্তাহে অন্তঃসত্ত্বাকে কেমোথেরাপি দেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শুরু হয় অপেক্ষা। নির্দিষ্ট সময়ে কেমোথেরাপি দেওয়ার পর আকারে সামান্য হলেও ছোটো হয় টিউমারটি।

[আরও পড়ুন: Covid-19: তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত? শিলিগুড়িতে Delta ভ্যারিয়েন্ট ও UK স্ট্রেইনে সংক্রমিত ৭]

ইতিমধ্যেই ফুটফুটে এক সন্তানের জন্ম দেয় সুমনা। ততদিনে আবার শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউও (Second Covid Wave) । চিকিৎসকরা বোঝান, আর দেরি করা ঠিক হবে না। সন্তানের মুখ দেখে আশ্বস্ত সুমনা রাজি হন অপারেশন থিয়েটারে যেতে। সম্প্রতি পাঁচ ঘন্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচারে (Operation) বাদ দেওয়া হয়েছে স্তনের মাংসপিণ্ডটি। ক্যানসার কোষ নির্মূল হয়েছে তা নিশ্চিত হতে বাদ দেওয়া হয়েছে বাহুমূলের লিম্ফ নোডও। কাঁটা ছেড়ার পর সুমনার স্তনের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছিল, তা যে কোনও সাধারণ মানুষ দেখলে আঁতকে উঠতেন। স্তন বৃন্তের পাশে তৈরি হয়েছিল গভীর ক্ষত। রোগী যেহেতু প্রথম থেকেই স্তন বাদ দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন ওভাবে তাকে ছেড়ে দিলে মানসিক আঘাত পেতেন। চিকিৎসকদের কাছে তাই পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ছিল স্তনের পুর্নগঠন।

Advertising
Advertising

ল্যাটিসিমাস ডরসি মায়োকিউটেনিয়াস ফ্ল্যাপ পদ্ধতিতে স্তনের (Breast) পুর্নগঠন করা হয়। পিঠের নিচ থেকে মাংস এনে বসানো হয় স্তনের জায়গায়। অস্ত্রোপচারের আগে ডপলার করে রক্ত সঞ্চালন দেখে নেওয়া আবশ্যিক। রক্ত সঞ্চালনের ধমনীগুলো অত্যন্ত সরু। তা বাঁচিয়েই করতে হয় এই জটিল অস্ত্রোপচার। ডা. মৈত্রর কথায়, “উনি চেয়েছিলেন স্তনটা আগের অবস্থায় রাখতে। ক্যানসার কোষ বাদ দেওয়ার পর স্তন বাহুমূলের মাঝে চওড়া গর্ত তৈরি হয়েছিল। আমরা পুর্নগঠন করে দিয়েছি।” এ অস্ত্রোপচারে চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্রকে সাহায্য করেছেন ডা. শতত্রুতু বর্মন, ডা. অন্তরীপ ভট্টাচার্য। পাঁচ ঘন্টার অস্ত্রোপচারে পিঠের থেকে মাংস এনে শূন্য বুকের ফাঁকা জায়গায় বসানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই রেডিওথেরাপি শুরু হবে ওই মহিলার। ৫ ঘন্টার এই অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেসিস্টদের ভূমিকা অপরিসীম। গাইনোকোলজি বিভাগের অপরিসীম দক্ষতা ছাড়া ক্যানসার আক্রান্ত তরুণীর সন্তান প্রসবও সম্ভব ছিল না। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্তনের ক্যানসার বিরল। অনেকেই এসময় স্তন ক্যানসারকে ল্যাকটেশনাল অ্যাবসেস বা মিল্ক সিস্ট ভাবেন। শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় স্তনে অস্বাভাবিতা ঠাওর হলে দেরি করতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা।

[আরও পড়ুন: খোলামেলা পোশাকে দিতিপ্রিয়া, ছবি দেখে Love পাঠালেন ‘মথুরা মোহন’!]

Advertisement
Next