অর্ণব আইচ: টেট নিয়োগ দুর্নীতিতে নতুন বিস্ফোরক তথ্য এল ইডির (ED) হাতে। এই মামলায় অভিযুক্ত সন্দেহে ধৃত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যর (Manik Bhattacharya) ছেলেও যে দুর্নীতিতে জড়িত, সেই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এবার তাঁর অন্যান্য আত্মীয়দেরও এই চক্রে যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করছেন ইডির তদন্তকারীরা। মানিকের ভাই, জামাই, বেয়ান – এই তিনজনের নাম সামনে এসেছে। বৃহস্পতিবার আদালতে সওয়াল-জবাবের সময় ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি দাবি করেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে যে টাকা নেওয়া হয়েছে, তা ক্যাশ হয়ে ঢুকেছে মানিকের এই তিন আত্মীয়ের অ্যাকাউন্টেও। এছাড়া আরও ৩২৫ জন প্রার্থীকে টাকার বিনিময়ে পাশ করিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ইডির তরফে মানিক ভট্টাচার্যকে ফের ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে রাখার আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদন মঞ্জুর করে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
২০১৪ সালে টেটে (TET) পাশ না করা ৩২৫ন জন পরীক্ষার্থী স্রেফ টাকার বিনিময়ে স্কুলে চাকরির যোগ্যতা অর্জন করেছেন! বৃহস্পতিবার আদালতে মানিক মামলায় সওয়াল-জবাবে এমনই দাবি করেছেন ইডির আইনজীবী। ফিরোজ এডুলজির বক্তব্য, ওই ৩২৫ জন পাশ করেননি টেটে। কিন্তু তাঁদের থেকে মাথা পিছু ৭ লক্ষ টাকা করে নিয়ে নম্বর বাড়িয়ে যোগ্যতার তালিকায় নাম তুলে দেওয়া হয়। তার জেরেই তাঁরা চাকরি পান। এখন প্রশ্ন হল, সবাই কি একই পরিমাণ টাকা ক্যাশে দিয়েছেন? যোগ্যতামান না পেয়েও চাকরি কীভাবে পেলেন?
[আরও পড়ুন: নজরে পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২২ জেলায় কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করল তৃণমূল]
অন্যদিকে, মানিক ভট্টাচার্যর ভাই, জামাই, বেয়াইয়ের নাম উঠে এসেছে এই দুর্নীতিতে। ইডির দাবি, এই তিনজনও ওই টাকার ভাগ পেয়েছেন। তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ওই টাকা। ২০১৪ সালের টেটে অনুত্তীর্ণদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়েছিল, তার হিসেব করলে ২৫ কোটির অঙ্ক পেরিয়ে যাবে। এছাড়া অফলাইন ট্রেনিং সেন্টারগুলি থেকে যে টাকা নেওয়া হত, তার পরিমাণ কম করে ২০ কোটি হবে। এমনকী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, নেতাজির নামে ট্রেনিং সেন্টারগুলি থেকেও টাকা আদায় হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে ডিসেম্বরে অশান্তির আশঙ্কা, পুলিশ প্রশাসনকে ফের সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী]
সওয়াল-জবাবে মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত পালটা প্রশ্ন তোলেন, এই তদন্ত শেষ হতে আর কতদিন লাগবে?সারদা তদন্ত তো ১০ বছর ধরে চলছেই। এই মামলাও কি তাই হবে? অভিযুক্তদের বয়স তো ততদিনে অনেক বেশি হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘স্পাইডারম্যান’-এর জনপ্রিয় সংলাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, ”ক্ষমতা বাড়লে দায়িত্বও বাড়ে। কিন্তু ইডি সেই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে কোথায়?” তাতে ইডির তরফে জবাব দেওয়া হয়, সাত বছরের পুরনো মামলা, সাড়ে তিন বছর ধরে তো অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করাই যায়। আর ইডিকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা বরাবর দায়িত্বের সঙ্গেই ব্যবহার করা হয়েছে। যারা অন্য কিছু বলছেন, ভুল বলছেন।
আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত টেট মামলায় মানিক ভট্টাচার্যর জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু বিরোধিতা জানায় ইডি। তারা ১৪ দিনের হেফাজতের আবেদন জানিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মানিক সহযোগিতা করছেন না। অথচ মানিকের দাবি, ”আমাকে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল, তার কোনওটারই উত্তর জানি না। কী করে উত্তর দেব? তাঁরা বারবার একই প্রশ্ন করছেন, আমি উত্তর দিতে পারছি না। অসহযোগিতার প্রশ্নই ওঠে না।”