অর্ণব আইচ: অয়ন শীলের পুর নিয়োগ দুর্নীতির টাকা গিয়েছে কোন কোন প্রভাবশালীর কাছে? আদালতের কাছে সেই প্রভাবশালীদের নাম একে একে প্রকাশ করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। এই পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ইডির। কুন্তল ও শান্তনুর মতো বড় ‘এজেন্ট’দের মাধ্যমে পুর দুর্নীতির বিপুল টাকা প্রভাবশালীদের হাতে যেত কি না, সেই তথ্যও জানার চেষ্টা করছেন ইডি আধিকারিকরা। তবে ইডির গোয়েন্দাদের মতে, শুধু পুরসভার নিয়োগের নাম করে কয়েকশো কোটি টাকারও বেশি তুলেছেন অয়ন শীল (Ayan Seal)। গোয়েন্দাদের কাছে আসা হিসাব অনুযায়ী, এসএসসি, টেট-সহ শিক্ষক নিয়োগ ও পুরসভার দুর্নীতি মিলিয়ে প্রায় ৮০ কোটি টাকা কমিশন নিয়েছেন অয়ন নিজেই। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে তৎপর গোয়েন্দারা।
পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে ইডি তদন্ত শুরু করলেও সিবিআইকেও এই ব্যাপারে জানানো হয়েছে। ফলে সিবিআইও (CBI) এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করতে পারে। তবে অয়ন শীলকে জেরা ও তাঁর সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি করে ইডি যে নথি উদ্ধার করেছে, তাতে উঠে এসেছে টাকা লেনদেন সম্পর্কে প্রচুর তথ্য। তদন্তে জানা গিয়েছে, রাজ্যের প্রায় ৬০টি পুরসভার কর্মী নিয়োগ করে অয়ন শীলের সংস্থা। একেকটি পদের নিয়োগের জন্য চার থেকে আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হত বলে অভিযোগ। সেইমতো পুর দুর্নীতি থেকে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ও এসএসসি (SSC) দুর্নীতি থেকে অন্তত ৩৫ কোটি টাকা কমিশন হিসাবে তুলেছেন অয়ন।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় প্রকাশিত গবেষণায় বিশ্ব জয়, ‘গণিতে নোবেল’ পাচ্ছেন শতায়ু ভারতীয় বিজ্ঞানী]
অয়নের দাবি, তিনি প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা করে নিতেন। বাকি টাকার মধ্যে কমিশন দিতে হত এজেন্টদের। কিন্তু ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ টাকা যেত প্রভাবশালীদের কাছে। গোয়েন্দাদের মতে, সেই প্রভাবশালীদের মধ্যে যেমন রয়েছেন প্রত্যেকটি পুরসভার বিভিন্ন স্তরের কর্তা, তেমনই তার উপর মহলেও টাকা পৌঁছে যেত বলে দাবি তুলেছেন অয়ন। কিছুদিন আগেই আদালতে ইডি দাবি করেছিল যে, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Santanu Banerjee) সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রায় ৩০ জন প্রভাবশালীর। ইডির দাবি, জেরার মুখে অয়ন শীলও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম বলেন। এছাড়াও তদন্ত করে আরও প্রভাবশালীদের নাম জানতে পারেন গোয়েন্দারা। বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে ওই প্রভাবশালীদের কাছে যে পুর নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা গিয়েছে, এই ব্যাপারে গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত। সেই সংখ্যাও ৩০ বা ৪০-এর কম হবে না বলেই তাঁদের অভিমত।
[আরও পড়ুন: ‘দলে ফিরতে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবেই’, দণ্ডির পক্ষে সওয়াল করে বিতর্কে অপরূপা পোদ্দার]
ইতিমধ্যেই ইডি সেই প্রভাবশালীদের তালিকা তৈরি করেছে। মঙ্গলবার অয়ন শীলকে ব্যাঙ্কশালের বিশেষ ইডি আদালতে পেশ করা হবে। সেই সঙ্গে আদালতে কেস ডায়েরির মাধ্যমে সেই প্রভাবশালীদের নামও জানাতে পারে ইডি। এদিকে, শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় অয়ন শীলকে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে সাহায্য করতেন, সেই তথ্যও গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন। কুন্তল ও শান্তনুর এজেন্টরা পুর দুর্নীতির টাকা তুলতেন কি না, সেই সম্পর্কে ইডি তথ্য জানার চেষ্টা করছে। তবে অয়ন শীলের কাছ থেকে পুর দুর্নীতির টাকা যে অয়ন শীলের কাছে পৌঁছত, সেই বিষয়ে গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত। কুন্তল ও শান্তনুর মাধ্যমে দুর্নীতির বিপুল টাকা কীভাবে ও কোন কোন প্রভাবশালীর কাছে গিয়েছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি।