অর্ণব আইচ: ভুয়ো ই-ওয়ালেট ( E-Wallet) অ্যাকাউন্ট খুলতে OTP কিনছে জালিয়াতরা। একেকটি OTP কেনা হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। পরে সেই OTP ৬৫ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পর্ণশ্রীতে জাল সিমকার্ড চক্রের তদন্ত শুরু করে পুলিশ একটি বিশেষ সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কে চারটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্য, এমনকী, আফগানিস্তান, বালুচিস্তান-সহ বিভিন্ন দেশের ১৫ থেকে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে একেকটি গ্রুপে। বৃহস্পতিবার ডিসি (SWD) স্বাতী ভাঙ্গালিয়া জানান, জাল সিমকার্ড চক্রটির কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৮০টি জাল আধার কার্ড। এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে চার থেকে ছ’টি পর্যন্ত জাল আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এবার এই জাল আধার কার্ডের চক্রটির সন্ধানেও চলছে তল্লাশি।
ইতিমধ্যে কয়েক দফায় তল্লাশি চালিয়ে তিন হাজারের উপর জাল সিমকার্ড উদ্ধার হয়েছে। আরও প্রচুর সিমকার্ড কলকাতা থেকে অসম, আবার বিভিন্ন জেলায় পাচার হয়েছে।
পর্ণশ্রী এলাকায় এক ব্যক্তিকে KYC আপডেট করার নামে ফোন করে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ লক্ষ টাকা তুলে নেয় জালিয়াতরা। সেই সূত্র ধরে তদন্ত করে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ জাল সিমকার্ডের চক্রের সন্ধান পায়। এই ঘটনায় প্রথমে ই-ওয়ালেট সংস্থার কর্মী পার্থ সাহা, শিবশংকর পালকে জেরা করা হয়। সেই সূত্র ধরে শ্যামল রায়, রামু গিরি, নিরঞ্জন পালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[আরও পড়ুন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক নয়, হিজাব মামলায় অন্তর্বর্তী নির্দেশ কর্ণাটক হাই কোর্টের]
শেষে মোবাইল সংস্থার কর্মী অভীক মুখোপাধ্যায় ও অভিজিৎ রিট ধরা পড়ে। জানা যায়, জামতাড়ার জালিয়াতরা কলকাতার প্রি অ্যাকটিভেটেড তথা জাল সিমকার্ড ব্যবহার করে ফোন করেছে। ওই সিমকার্ড দিয়ে খোলা হয়েছে একটি ই-ওয়ালেটের অ্যাকাউন্ট। প্রতারণার টাকা অভিযোগকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এসে পৌঁছেছে ই-ওয়ালেটে। সেখান থেকে চলে যাচ্ছে অন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
পুলিশ জেনেছে, ই-ওয়ালেটের কর্মীদের OTP বিক্রির টার্গেট থাকে। পার্থ সাহা নামে ধৃত এক ব্যক্তি জানিয়েছে, টার্গেট মেটাতে সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপ থেকে ১৫ টাকা দিয়ে একেকটি OTP কেনে তারা। একেকটি OTP কেনার অর্থ ই-ওয়ালেটের অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি হওয়া। সেই অ্যাকাউন্ট বিক্রি করা হত ৬৫ টাকা করে। ওই ই-ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট চলে যেত জামতাড়া বা অন্য জালিয়াতদের হাতে। আর ই-ওয়ালেটের অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্যও জালিয়াতদের কাছে বিপুল চাহিদা রয়েছে জাল সিমকার্ডের।
একেকজন গ্রাহকের কাছ থেকে একাধিক বায়োমেট্রিক আঙুলের ছাপ নিয়ে জাল সিমকার্ড তৈরি হচ্ছে। আবার জাল সিমকার্ডের জন্য জাল আধার কার্ড তৈরি করছে জালিয়াতরা। একই ছবির ভিত্তিতে নাম পালটে তৈরি হচ্ছে জাল আধার কার্ড। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠিকানাগুলি উত্তর ২৪ পরগনার। সেই ভুয়ো আধার কার্ডের নম্বর দেখে মোবাইল সংস্থাগুলিও তা আসল না কি জাল, তা পরীক্ষা করে দেখছে না বলে অভিযোগ। এই সমস্যার সমাধানে মোবাইল সংস্থাগুলিকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।