shono
Advertisement

‌অমানবিক!‌ অগ্রিম না দেওয়ায় হাসপাতালের বাধা, করোনায় মৃত বাবাকে দেখতে পেল না ছেলে

অভিযোগ পেয়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানা করল স্বাস্থ্য কমিশন।
Posted: 09:36 PM Oct 12, 2020Updated: 09:36 PM Oct 12, 2020

অভিরূপ দাস: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আগেই ছিল বাইপাসের ধারে ডিসান হাসপাতালের বিরুদ্ধে। নালিশ ছিল অতিরিক্ত বিল নিয়েও। এবার তার চেয়েও মর্মান্তিক ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এল। অগ্রিম টাকা পুরো না দেওয়ায় পরিবারকে অন্ধকারে রেখেই পুড়িয়ে দেওয়া হল করোনায় (Covid-19) মৃতের দেহ। শেষবারের মতো বাবাকে দেখতে পেলেন না ছেলেও। গোটা ঘটনায় হতবাক রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনও। ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে কমিশন চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেও ফেলেন, “এবার ডিসান হাসপাতাল গিনেস বুকে নাম তুলবে।” শেষপর্যন্ত শহরের এই বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানাও করা হল।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ জুলাই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ডিসান হাসপাতালে (Disan Hospital) ভর্তি হন কালীঘাট (Kalighat) নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটের বাসিন্দা করণরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বছর সত্তরের করণবাবুর ফুসফুসে প্রবল সংক্রমণ ছিল। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে গিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর পরই শুরু হয় জুলুমবাজি। করণবাবুর ছেলে শমীকের কথায়, ”হাসপাতাল থেকে বলা হয় দু’‌লক্ষ টাকা অগ্রিম দিতে হবে, নাহলে ভরতি নেওয়া যাবে না।” সে সময় অত টাকা ছিল না রোগীর পরিবারের কাছে। ১ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েই রোগীকে ভরতি করা হয়।

[আরও পড়ুন:‌‌‌ ‘বাংলায় দ্রুত লোকাল চালুর ব্যবস্থা করুন’, রেলমন্ত্রীকে চিঠি বিজেপি সাংসদ স্বপন দাসগুপ্তের]

চাহিদা মতো টাকা না পেয়ে প্রথম থেকেই রুষ্ট ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, যে ১৮ দিন রোগী ওখানে ভর্তি ছিলেন সে সময় কোনও রকম যোগাযোগ করা যায়নি হাসপাতালের সঙ্গে। কোন পথে রোগীর চিকিৎসা চলছে, তা জানানোরও প্রয়োজন মনে করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একদিনও রোগীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলায়নি।

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, হাসপাতালে কোনও করোনা আক্রান্তের কাছে মোবাইল রাখার অনুমতি নেই। তবে পরিজনদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারবেন আক্রান্ত। এই কথা বলার বন্দোবস্ত করতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই। সেখানে কেন ডিসান হাসপাতাল একদিনও রোগীর সঙ্গে কথা বলানোর বন্দোবস্ত করল না? উঠছে সেই প্রশ্নও। এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ১৮ দিন ডিসান হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর মারা যান করণবাবু। সাধারণত হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু হলে দূর থেকে মৃতদেহকে শেষবারের মতো চোখের দেখা দেখতে পায় পরিবার। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কর্মীরাই মৃতদেহের ব্যাগ খুলে পরিবারকে দেখার সুযোগ করে দেয়। তারপর দেহ নিয়ে চলে যায় পরিবারের লোকেরা।

[আরও পড়ুন:‌‌‌ সাবধান! মোবাইলের স্ক্রিন, নোটে ২৮ দিন বাঁচতে পারে করোনা ভাইরাস, দাবি গবেষকদের

কিন্তু এক্ষেত্রে তাও হয়নি। করণবাবুর ছেলের অভিযোগ, ‘‌‘‌হাসপাতাল আমাদের বাবার মৃত্যুর সঠিক সময়টাই জানায়নি। খবর পেয়ে আমরা যখন হাসপাতালে পৌঁছই, শুনি কর্পোরেশনের লোকেরা তার আগে এসেই মৃতদেহ নিয়ে চলে গিয়েছে।’‌’‌ এরপরই স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানান মৃতের ছেলে। গোটা ঘটনায় হাসপাতালকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে স্বাস্থ্য কমিশন। এখানেই শেষ নয়, ১৮ দিনে করণবাবুর কোভিড চিকিৎসার বিল হয়েছে ৭ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫১৯ টাকা। হাসপাতালের দাবি, পরিবারের অনুরোধে তার থেকে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও চিকিৎসার সমস্ত কাগজ খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন নির্দেশ দিয়েছে আরও ৮০ হাজার টাকা ডিসান হাসপাতালকে ফেরত দিতে হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement