shono
Advertisement
Institute of Neuro Science

প্রসবের পরই কোমায়, দুই সন্তানের ভিনদেশি মাকে জাগালেন কলকাতার ডাক্তাররা

বাংলার এই 'ভালোবাসা' ভুলতে চান না ইয়াংকি আর তাঁর স্বামী।
Published By: Paramita PaulPosted: 01:57 PM Dec 28, 2024Updated: 02:03 PM Dec 28, 2024

অভিরূপ দাস: প্রতিবেশী দেশের সরকার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছিল। বাঁচিয়ে তুলল বাংলা। তুলল সন্তান জন্মানো ইস্তক দেখেননি তাদের বছর বত্রিশের ইয়াংকি। শেষ যখন তিনি সজ্ঞানে তখনও যে তারা ভূমিষ্ঠ হয়নি। নড়ছিল পেটে একটু একটু করে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অসহ্য মাথাব্যথা। বমি। আর কিচ্ছু মনে নেই তাঁর।

Advertisement

পরীক্ষা করে প্রতিবেশী দেশ ভুটানের চিকিৎসকরা জানান, 'কোমায় চলে গিয়েছেন।' সেটা মে মাসের শেষ সপ্তাহ। সেই ইস্তক বাচ্চাদের মুখ দেখা হয়নি। ছমাস পর নভেম্বরে যখন চোখ খুলল সন্তানরা ছমাসের। বাংলার এই 'ভালোবাসা' ভুলতে চান না ইয়াংকি আর তাঁর স্বামী।

'থান্ডার ড্রাগনে'র দেশ থেকে মল্লিকবাজারের হাসপাতালের দূরত্ব এক হাজার চল্লিশ কিলোমিটার। অ্যাম্বুল্যান্সে করে সে পথ পাড়ি দেওয়ার স্মৃতি নেই ওয়াংচুর। কোমায় ছিলেন তো। জীবন্ত এক 'লাশ'কেই নিয়ে আসা হয়েছিল ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেসে। প্রথমে ভর্তি হন চিকিৎসক ডা. দেবজ্যোতি পাঠকের অধীনে। তৈরি হয় একটি টিম। সেখানে তাঁকে দেখছিলেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস এস আনন্দ, ডা. চিরঞ্জীব দাস। শরীর একটু স্থিতিশীল কিন্তু কাটছে না ঘুম। এমতাবস্থায় দায়িত্ব নেন ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁর হাতেই শেষমেশ নতুন জীবন। ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, "প্রতিবেশী দেশের সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, কোমায় চলে গিয়েছেন। ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। মৃত্যু নিশ্চিত। ওঁর স্বামীকে ধন্যবাদ, হাল ছাড়েননি।" দুটো হাত পাথরের মতো শক্ত। চোখ খুলছে না।

কীভাবে হল এমনটা? স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডি. সিদ্ধার্থ শঙ্কর আনন্দ জানিয়েছেন,"এখানে রোগী আসার পর আমরা একাধিক পরীক্ষা করি। এমআরআই, ইইজি, হাতে পায়ে স্নায়ুর পরীক্ষা করি, মেরুদণ্ডের পরীক্ষা করি। যেটুকু ক্লু পাই, তাতে বোঝা যায় সন্তান ডেলিভারি করানোর সময় যে স্পাইনাল অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হয় তার থেকেই কিছু হয়েছে। এমন ঘটনা যদিও অত্যন্ত বিরল।"

প্রথমে ভেন্টিলেশন। সেখান থেকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট। চ্যালেঞ্জ ছিল একটাই, রোগীর ঘুম ভাঙাতে হবে। কোমা স্টিমুলেশন প্রোগ্রামেও রোগীর উন্নতি হচ্ছিল না। এমতাবস্থায় রীতিমতো রিসার্চ শুরু করেন ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়। একাধিক জার্নাল ঘেঁটে খোঁজ পান 'জলপিডেম' ট্যাবলেটের। এই 'জলপিডেম' মূলত ঘুমের ওষুধ।

যাদের ভালো করে ঘুম হয় না তাদের ১০ মিলিগ্রাম থেকে ২০ মিলিগ্রাম মাপে এই ওষুধ দেওয়া যায়। কোমাচ্ছন্ন রোগীকে ঘুমের ওষুধ? "এখানেই তো মজা। জলপিডেমের একটা পরস্পরবিরোধী প্রভাব আছে। সামান্য ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু কোমাচ্ছন্ন রোগীর ঘুম ভাঙানোর ক্ষমতা আছে ওষুধের।" জানিয়েছেন ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়। ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার এ এক টেস্ট ম্যাচ। প্রতীক্ষাই যেখানে একমাত্র সম্বল।

৩ জুলাই থেকে ১০ মিলিগ্রাম জলপিডেম দেওয়া হয় তিনদিনের জন্য। কাজ হয়নি। পরের তিনদিন ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে ২০ মিলিগ্রাম করা হয়। আবার পরের তিনদিন ফিরে আসা হয় ১০ মিলিগ্রামে। ১৪ জুলাই প্রথম চোখ খোলেন মহিলা। এরপর আবেগ ফিরিয়ে আনতে দেখানো হয় মেয়ের ভিডিও। দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ধীরে ধীরে ফিরে আসে স্মৃতি। শেষমেশ সীমানা পেরিয়ে নিজের দেশে ফিরে গিয়েছেন ইয়াংকি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • প্রতিবেশী দেশের সরকার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছিল।
  • বাঁচিয়ে তুলল বাংলা।
  • তুলল সন্তান জন্মানো ইস্তক দেখেননি তাদের বছর বত্রিশের ইয়াংকি।
Advertisement