রমেন দাস: বাংলা নিয়ে শোরগোল! সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরেই রাজ্য জুড়ে চর্চায় বাংলা। অর্থাৎ বাংলা ভাষার কথা ফের আলোচিত হচ্ছে বাংলা জুড়ে। কিন্তু কেন এই অবস্থা? সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক হতে চলেছে বাংলা ভাষা! অর্থাৎ বাংলা মাধ্যমের নয়, এমন বিদ্যালয়ে এবার দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ভাষা হিসাবে পড়াতেই হবে বাংলা! কিন্তু এমন দাবি উঠলেও ঘটনা আসলে ভিন্ন, দাবি করা হচ্ছে এমনও।
সূত্রের দাবি, রাজ্যে স্বাস্থ্য কমিশনের ধাঁচে শিক্ষা কমিশন (Education Commission of West Bengal) গড়ার প্রস্তাব রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ হলেও বাংলা বিষয় যে সমস্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ে এখনই আবশ্যিক হচ্ছে, এমন কিছু বলা হয়নি! বরঞ্চ পড়াশোনায় বাংলা যাতে আর ‘ব্রাত্য’ না থাকে, এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সমস্ত মাধ্যমের বিদ্যালয়কে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলতে চলেছে সরকার। পড়ুয়ার মাতৃভাষা অনুযায়ী, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ভাষা হিসাবেও বাংলা পড়ানোর ব্যবস্থা নিয়ে আরও কড়া হতে পারে রাজ্য। নতুন শিক্ষানীতির আধারেই এই ভাবনা নিতে পারে সরকার, জানা গিয়েছে এমনও। রাজ্যের নয়া শিক্ষানীতিতে যে যে পরিবর্তন আসতে চলেছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত বাংলা পড়ানোর বিষয়টিও।
[আরও পড়ুন: ‘বুদ্ধবাবু হাসপাতালে ভুগছেন, আমি জেলে’, জামিন চেয়ে আদালতে সওয়াল পার্থর]
আর এখানেই বাংলা নিয়ে খানিকটা আশার আলো দেখছেন রাজ্যের শিক্ষা-সংস্কৃতি মহল। লরেটো কলেজের (Loreto College) ভর্তির বিজ্ঞপ্তি-বিতর্কের পরে ফের বাংলা নিয়ে আচমকা শোরগোলে ‘বাংলার সুদিন’ হিসেবেই দেখছেন কেউ কেউ। এই বিষয়ে কী ভাবছেন রাজ্যের বিশিষ্টজনদের একাংশ?
‘বাংলা শোরগোল’ নিয়ে মুখ খুলেছেন অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। তিনি বলছেন, ”বাংলাকে আবশ্যিক করা হতে পারে এমন সম্ভাবনা যদি আদৌ তৈরি হয়। এই সিদ্ধান্ত যদি রাজ্য সরকার নেয়, তাহলে এর চেয়ে ভাল খবর তো হতে পারে না!”
[আরও পড়ুন: যমজ বোনের মধ্যে মোবাইল নিয়ে ঝগড়া, দিদির উপর অভিমানে আত্মঘাতী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী]
অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, ”জানি না আদৌ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিনা। কিন্তু এই ভাবনা যদি রাজ্য সরকারের তরফে নেওয়া হয়, তা যুগোপযোগী। বাংলাকে গুরুত্ব না দিলে, মাতৃভাষায় শিক্ষার উন্নতি না ঘটলে, আসলে ক্ষতি তো আমাদেরই!”
যদিও এই চর্চায় এখনই মন্তব্যে নারাজ সঙ্গীতশিল্পী চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (Chandril Bhattacharya)। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে তিনি জানান, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে এখনও অবগত নই, আর এই ধরনের চর্চায় এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাইছি না। যদি কিছু প্রয়োজন হয়, নিশ্চিত পরে বলব।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) অধ্যাপক আব্দুল কাফি (Abdul Kafi)। বহুকাল বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে চর্চা তাঁর। তাঁর কথায়, ”এমন উদ্যোগ যদি সরকার সত্যিই নেয়, তাহলে সেই ভাবনাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এটাও একই সঙ্গে ভাবতে হবে যে, যাঁদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। ধরা যাক, কেউ গুজরাটি (Gujarat)। তাঁকে যদি বলা হয় বাংলা পড়তেই হবে, এটি যেমন ঠিক হবে না। আবার যাঁর মাতৃভাষা বাংলা অথবা কেউ বাংলা পড়তে চান, তাঁকে যদি কেউ বাংলা পড়তে না দেন! তাহলে সেটাও ঠিক হবে না।”
[আরও পড়ুন: এবার অঙ্ক পরীক্ষাতেও শুভেন্দু-নওশাদ! সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল প্রশ্নপত্র ঘিরে বিতর্ক]
প্রায় একই সুর অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তেরও (Sohini Sengupta)। তিনি বলছেন, ”এমন ভাবনা যদি রাজ্যের তরফে নেওয়া হয়। তাহলে তা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত বলেই মনে করি। তবে এদিকটাও দেখা উচিত কোনও ভাষাই যেন কারওর উপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়!” কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ”আমি ইংরাজি মাধ্যমের ছাত্রী। কিন্তু আমার পড়াশোনায় বাংলা বিষয় তো ছিলই!”
বাংলার ‘সুদিন’ নিয়ে অধ্যাপক মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় (Manabi Bandyopadhyay) বলছেন, ”এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আপনাদের কাছ থেকে শুনছি। যদি এটা সত্যিই হয়, বাংলা রাজ্যের সব বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থায় আরও জোর দেয় সরকার! এর চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত হতেই পারে না।”
নাট্যকার কৌশিক সেনও (Kaushik Sen) মুখ খুলেছেন বাংলা প্রসঙ্গে। তিনি বলছেন, ”সমসাময়িক পরিস্থিতিতে এমন যদি রাজ্য সরকার ভাবে, অর্থাৎ বাংলাকে সমস্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়াতেই হবে, একথা যদি ভাবনার মধ্যে আনা হয়। তাহলে তা সমর্থনযোগ্য বলেই আমার মনে হয়।”
অভিনেতা সৌরভ দাস (Actor Saurav Das) এই প্রসঙ্গে বলছেন, “বাংলার রাজ্যে বাংলা পড়ানো হবে না, এটাই অস্বাভাবিক বলে মনে হয়! এমন সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই স্বাগত জানাব। আসলে বাংলাকে তো আমরাই পিছিয়ে ফেলছি খানিকটা। তাই, এমন ভাবা যদি হয়। খুব ভাল হবে।”
সমস্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো আবশ্যিক হবে কি হবে না, এবিষয়ে এখনও কোনও সরকারি সিদ্ধান্ত জানায়নি রাজ্য। কিন্তু শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে বেসরকারি বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, ‘বাড়বাড়ন্তে’ নাগাল দিতে চলেছে সরকার। আর এই সূত্রেই ক্রমশ ‘ব্রাত্য বাংলা’র অবনমন ঠেকাতে উদ্যোগ নিতে পারে মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার। রাজ্যের নয়া ভাবনার প্রকাশে তাই, বাংলার সুদিনই দেখছেন অনেকেই!