রমেন দাস: 'খেলা', পালটা 'খেলা'য় সরগরম রাজ্য রাজনীতি! একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে 'খেলা হবে' ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাব্বিশের ভোটের আগেও 'ভোটার তালিকায় খেলা হবে' বলছে রাজ্যের শাসকদল। এবার সেই সুরেই যাদবপুর কাণ্ডের (Jadavpur University Incident) পর বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের পালটা ডাক 'চালিয়ে খেলা হবে।'

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ভোট হচ্ছে না। নির্বাচনের কথা বললেই বারবার আইনশৃঙ্খলার কথা বলা হচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলি তৃণমূলের ক্রাইম সিন্ডিকেটে পরিণত হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন দেবাঞ্জন। তাঁর কথায়, "২০১৩-২০১৪ সালে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট হয়নি। কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট হয়নি। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে শেষবার নির্বাচন হয়েছিল। ৯০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় চলছে অস্থায়ী উপাচার্য দিয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অস্থায়ী উপাচার্য দিয়ে চলছে। ছাত্র সংসদের নির্বাচনের কথা এলেই আইনশৃঙ্খলার কথা উঠে আসে। তৃণমূলের মনোভাব বোঝা যাচ্ছে। বোমা বাঁধার যোগ্যতার নিরিখে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে তৃণমূলের ক্রাইম সিন্ডিকেট।" তিনি প্রশ্ন তোলেন, "দিনের পর দিন কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না।"
একই সঙ্গে তাঁর দাবি, "ক্যাম্পাসের মাটিতে পড়ে থেকে ক্রিমিনালরাজ বন্ধ করতে হবে। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার।" এরপরই দেবাঞ্জন বলেন, "ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে এবার চালিয়ে খেলা হবে।"
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, "ভালো ব্যাপার। খুব ভালো ব্যাপার। হোক খেলা। দেখি, চালিয়ে খেলার ক্ষমতা!আমরা মা-মাটি-মানুষের আশীর্বাদে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত। এমনি তো এসএফআই বলে কিছু নেই। এখন এসব বলে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার আসতে চাইছে। গুরুত্ব তৈরির চেষ্টা।" তৃণমূলের স্লোগান নকল? তৃণাঙ্কুরের খোঁচা, "সিপিএম তো কপি করতে এক্সপার্ট। ওদের তো নিজের বলে কিছুই নেই। বাংলার বুকে অস্তিত্ব নেই। ওদের আবার ছাত্র সংগঠন! ওরা মিডিয়া ম্যানিয়াক। এসব করে গুরুত্ব বাড়াতে চাইছে।"
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতিতে নতুন স্লোগানের আমদানি করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'খেলা হবে' নিয়ে গানও লিখেছিলেন তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য। ভোটের বাজারে সেই গান আর স্লোগান ছিল 'হট কেক'।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই স্লোগানকে একটু 'মডিফাই' করে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে বাজার গরম করতে চাইছে বাম ছাত্র সংগঠন। কেউ কেউ বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই বামেরা 'পপুলার কালচার'কে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে জনমানসে ছাপ ফেলতে চাইছে। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ 'লুঙ্গি ডান্সে'র প্যারোডি 'হাল ফেরাও, লাল ফেরাও', 'বেলা চাও'-এর সুর নকল করে তৈরি 'পিসি যাও' কিংবা 'টুম্পা সোনা'র প্যারোডি। এবার বঙ্গ রাজনীতিতে সাড়া ফেলা স্লোগান 'খেলা হবে'-কেও নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চাইছে তারা।
তৃণমূলের একাংশের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'খেলা হবে' স্লোগানের অর্থ, রাজ্যে উন্নয়নের খেলা হবে, মহিলা সশক্তিকরণের খেলা হবে, ছাত্র-যুব শক্তির হাত শক্ত করার খেলা হবে। কিন্তু এদিন এসএফএইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-র এই 'চালিয়ে খেলা'র ডাকের অর্থ নৈরাজ্যের খেলা, বিশৃঙ্খলার খেলা, দাবি রাজনৈতিক মহলের একাংশের।