স্টাফ রিপোর্টার: বিচারপতি পদে বসে সংযত হয়েই মন্তব্য করা উচিত। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)ইস্যুতে এমনই মনে করছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। শনিবার তিনি এই মর্মে মতপ্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি একাধিক বিষয়ে হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক বাঁধে। নিজের এজলাসে চলা বিচারাধীন মামলা নিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জেরেও প্রবল বিতর্ক (Controversy) তৈরি হয়। সেই সংক্রান্ত মামলাতেই শুক্রবার এজলাস বদলের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এনিয়ে দিনভর হাই কোর্টের অন্দরেও কানাঘুষো চলে।
যদিও এ প্রসঙ্গে বিশেষ কেউ মুখ খুলতে চাননি। বর্ষীয়ান আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ থেকে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রত্যেকে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাও নীরব। এদিকে শুক্রবার রাতে আদালত থেকে বেরনোর সময়ও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যার ফলে প্রশ্ন ওঠে, সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court)নির্দেশিকা কার্যত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেল কি না। এ নিয়ে আইনজীবীদের একাংশ তাঁকে সমর্থন করলেও বিরোধিতা করেছেন অন্য অংশ।
[আরও পডুন: এবার লুধিয়ানায় বিষাক্ত গ্যাস লিক, হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, আহতও বহু]
শুক্রবার রাতে হাই কোর্ট থেকে বেরনোর সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিও।’’ মন্তব্যটি ইতিমধ্যে নজর কেড়েছে। এবং সে প্রসঙ্গেই বিচারপতিদের সংযত হয়ে মন্তব্য করার মত প্রকাশ করেছেন বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলা সরানোর রায়ে হতাশ চাকরিপ্রার্থীদের একটা বড় অংশ। অনেকেই বলছেন, নিয়োগ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হতে পারে অনিশ্চয়তা। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজে বলেছেন, তিনি যে কাজ ৬ মাসে করতেন, সেই কাজ করতে ৬০ বছরও লেগে যেতে পারে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, বেঞ্চ বদলে সত্যিই কি নিয়োগ মামলা ধাক্কা খেতে পারে? অন্যান্য বিচারপতির কাজ নিয়েও কি প্রশ্ন তুলছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়?
তেমনটা অবশ্য মনে করছেন না হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘সব বিচারপতির কাজই সমান। শুধু বিচারের ধরন আলাদা।’’ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আসলে উনি সময়টাকে নিয়ে বলতে চাননি। কাজের পদ্ধতিগত পার্থক্যের কথা বলতে চেয়েছেন। তাঁর বিচারের ধরন এক রকম, আরেকজন বিচারপতির কাজের ধরন অন্য রকম।’’
[আরও পডুন: ‘জনতা আমার কাছে ঈশ্বর’, ‘মন কি বাত’-এর ১০০তম পর্বে আবেগরুদ্ধ মোদি]
ফলে এজলাস বদল হলেও মামলায় প্রভাব পড়ার কোনও প্রশ্ন থাকছে না বলে মনে করেন বিচারপতি করগুপ্ত। হাই কোর্টের বিচারাধীন মামলার এজলাস বদলের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। সে প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আদালতের কর্মপদ্ধতির দুটো ভাগ রয়েছে। বিচারবিভাগ ও প্রশাসনিক। প্রশাসনিক দিক থেকে না পারলেও বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে যদি কোনও আবেদন সুপ্রিম কোর্টে যায়, সেক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিতে পারে।’’