রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: জেলা কমিটিগুলির খোলনলচে বদল করল সিপিএম। কলকাতায় পার্টির চার উল্লেখযোগ্য মুখকে জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হল। অব্যাহতি পেয়েছেন বর্ষীয়ান ৪ নেতা - প্রাক্তন মন্ত্রী অনাদি সাহু, দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও অশোক চট্টোপাধ্যায়। অনাদি সাহু বর্তমানে দলের শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য সম্পাদক। পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্যও। দেবাঞ্জন বর্তমানে কলকাতা জেলা সিটুর সম্পাদক। তাই তাঁকে জেলা কমিটির বাইরে রাখা হল। সবমিলিয়ে কলকাতা জেলা কমিটি থেকে মোট ১২ জন বাদ পড়েছেন বয়স এবং খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে।
তবে এবারও সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন কল্লোল মজুমদার। এনিয়ে পরপর তিনবার কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্পাদক হলেন তিনি। মোট ৬৬ জনের জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। মূল কমিটি থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে ৩ জনকে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। জেলা কমিটিতে নতুন মুখের মধ্যে তরুণ প্রজন্ম থেকে এসেছেন ডিওয়াইএফআই নেত্রী পৌলবী মজুমদার ও জেলার প্রাক্তন এসএফআই নেতা বিকাশ ঝাঁ। নতুন যুক্ত হয়েছেন ১২ জন।
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কলকাতাকে টেক্কা দিয়েছে উত্তর কলকাতা। সম্মেলনের শেষদিনেও কলকাতায় সংগঠনের দুর্বলতার কথা উঠে এসেছে। নিচুতলায় সংগঠন অধিকাংশ জায়গাতেই ধুঁকছে, তার পাশাপাশি পার্টির কর্মসূচি একটানা পালন করার ক্ষেত্রেও চরম খামতি দেখা যাচ্ছে কলকাতায়। জবাবী ভাষণে কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্পাদক কল্লোল মজুমদারের বার্তা, এরিয়া কমিটি সক্রিয় করতে হবে। আন্দোলন বাড়াতে হবে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ভাষণে বলেছেন, ''মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। পার্টিকে দৃশ্যমান হতে হবে।'' সংগঠনকে আরও বাস্তবমুখী করার কথা বলেছেন সেলিম। ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন শুরু করা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। এমনই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে। শনিবার থেকে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে শুরু হয়েছিল কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্মেলন। সোমবার রাতে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, কলকাতা জেলা সিপিএমের সংগঠন ও আন্দোলনের কোনও জোর বাড়ছে না। সম্মেলন শেষে এটাতেই পার্টির নেতৃত্বের মধ্যে দুশ্চিন্তা রয়ে গিয়েছে। শহরের নানা অংশের মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন বা তাদের কাছে পৌঁছতেই পারছেন না জেলার পার্টি কর্মীদের বড় অংশ। ছাত্র এবং যুবরা তাও কিছু আন্দোলনের মধ্যে থাকলেও মহিলাদের আন্দোলন কার্যত নেই বললেই চলে। কিন্তু সম্প্রতি মহিলাদের সামনে রেখে আর জি কর এবং সন্দেশখালির মতো বড় আন্দোলন সংগঠিত হলো। কেন মহিলারা এই ধরনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, সেই প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। তন্ময় ভট্টাচার্যর নাম না করেও মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্টির অবস্থান আরও বেশি স্পষ্ট হওয়া উচিত বলেই মনে করেন মহিলা প্রতিনিধিদের একাংশ। তাদের বক্তব্য, এই নিয়ে পার্টির মধ্যে কোন ধোঁয়াশা থাকা উচিত না। পার্টির আরও দৃঢ় হাতে বিষয়টা দেখা উচিত।