অভিরূপ দাস: কলকাতার এক বৃহৎ অংশের নিকাশির জল যায় মহেশতলার ওপর দিয়ে। এই মহেশতলা আর কলকাতা পুরসভার সংযোগস্থলে রয়েছে মোট ৪৪টি খাটাল। গরুর গোবর মেশে নিকাশি নালায়। তাতেই বিপদ। পুরসভা সূত্রে খবর, গোবরের কারণে নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যায় অহরহ। অল্প সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে নালার জল বসতি এলাকার একাধিক বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বাসিন্দারা অভিযোগ জানান, ‘‘গোবরের দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না।’’ এই সমস্যা সমাধানে শুক্রবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছিলেন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিং। দূরভাষে সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস। খাটাল মালিকদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক চলে কয়েক ঘন্টা। বৈঠক শেষে মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) খাটাল সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই দ্রুত বৈঠক ডাকা হয়।’’
কোন পথে মিলতে পারে সমাধান? ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ছিলেন মহেশতলা (Mahestala)পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন রায়চৌধুরী, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যেন্দ্র সিং। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনওমতেই নিকাশি নালায় গোবর ফেলা যাবে না। এবার থেকে কলকাতা পুরসভা গোবর অন্যত্র নিয়ে গিয়ে ফেলার জন্য আলাদা গাড়ি দেবে। সেই গাড়ির তেলের খরচ, চালকের খরচ দিতে হবে খাটাল মালিকদের। ঠিক হয়েছে, গোবরের (Cowdung) জন্য খাটাল মালিকদের আলাদা চেম্বার তৈরি করতে হবে। তৈরি করতে হবে বিশেষ নালা। সেই নালা দিয়ে গোবর গিয়ে চেম্বারে পৌঁছবে। সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করবেন পুরসভার কর্মীরা। কোথায় ফেলা হবে এত গোবর? যৌথভাবে সেই জায়গা পছন্দ করবে কলকাতা পুরসভার (KMC) আর মহেশতলা পুরসভার আধিকারিকরা। চুয়াল্লিশটি খাটালের গোবর যেখানে জমা হবে সেখানে আগামী দিনে গোবর গ্যাস তৈরির প্ল্যান্ট করা যায় কিনা, তার প্রস্তাবও দিয়েছেন মেয়র পারিষদ তারক সিং।
[আরও পড়ুন: কবে গড়াবে দিঘার রথের চাকা? কী জানালেন মমতা?]
কিন্তু যদি সমস্ত খাটাল মালিক এই সিদ্ধান্তে রাজি না হয়? মেয়র পারিষদ (MIC) তারক সিংয়ের হুঁশিয়ারি, এমন সিদ্ধান্ত যে খাটাল মালিকরা মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুরসভা। ফি বছর পুরসভার কোটি কোটি টাকা খরচ হয় নিকাশি নালা পরিষ্কার করতে। গোবর নিকাশি নালায় মিশে যাওয়ায় পরিশ্রম বাড়ে অনেকটাই। পুরসভা সূত্রে খবর, নয়া সিদ্ধান্তের ফলে এই খরচ বাঁচবে।
[আরও পড়ুন: সুদীপ্তর থেকে দেড় কোটি নিয়েছিলেন চিদম্বরম জায়া নলিনী! সারদা মামলায় ইডির চার্জশিট]
উল্লেখ্য, শহর কলকাতায় খাটাল অবৈধ (Illegal)। মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, কলকাতা বহরে বাড়ছে ক্রমশ। এই কদিন আগেও যেখানে মফস্বল ছিল, এখন সেখানে বহুতল উঠছে। কলকাতা বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছেন খাটাল ব্যবসায়ীরা। মেয়র পারিষদের কথায়, এতগুলো মানুষের জীবিকা খাটালের ওপর নির্ভরশীল। আচমকা তা বন্ধ করে দিলে সংকটে পড়বেন মানুষগুলো। এদিনের বৈঠকে ছিলেন ডিজি (সিভিল) পিকে দুয়া, নিকাশি বিভাগের ডিজি শান্তুনু ঘোষও।