অর্ণব আইচ: ভুয়ো নথি দিয়ে জাল পাসপোর্ট তৈরিতে সিদ্ধহস্ত সমরেশ বিশ্বাসকে জালে এনে চাঞ্চল্যকর সমস্ত তথ্য হাতে পেল পুলিশ। তাতে দুঁদে গোয়েন্দাদেরও চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। তাঁকে জেরা করে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু এদেশে নয়, বাংলাদেশেও ছড়িয়ে জাল পাসপোর্টের কারবার। সেখানে এজেন্টের মাধ্যমে কাজ করে সমরেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশে অশান্তির আবহে জাল পাসপোর্ট সংক্রান্ত খবরাখবর ছড়িয়ে পড়া এবং তা ধরতে পুলিশি অভিযান দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সমরেশ। গ্রেপ্তারি এড়াতে সস্ত্রীক পালিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে। তবে সেখান থেকে ফিরতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে সে। তারপরই মেলে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য।
জাল পাসপোর্ট কাণ্ডে গত ১৮ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার রাতে বেহালা থেকে গ্রেপ্তার হয় দীপঙ্কর দাস। উদ্ধার হয় প্রচুর জাল নথি, এসবিআই ও ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের সিল, ৩৬টি ভারতীয় পাসপোর্টের ফটোকপি এবং ব্রিটেনের ভিসা। ধৃতকে জেরা করে জানা যায়, হরিদেবপুরের এক বাড়িতে চলত জাল নথি তৈরির কাজ। জেরায় আরও জানা গিয়েছে, টাকার বিনিময়ে জাল পাসপোর্ট তৈরি চক্রের মূল মাথা সমরেশ বিশ্বাসের তুরুপের তাস এই দীপঙ্কর। তার বয়ানের ভিত্তিতে খোঁজ শুরু হয় সমরেশের। কিন্তু গ্রেপ্তারি এড়াতে গত ১০ ডিসেম্বর সমরেশ সস্ত্রীক বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে বলে খবর মেলে। ১২ তারিখ তার বারাসতের বাড়িতে অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশ। সমরেশকে না পেয়ে তার ছেলে রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ১৩ ডিসেম্বর সমরেশ দেশে ফিরতেই পরেরদিন তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সমরেশ ও তাঁর স্ত্রী-পুত্রের পাসপোর্ট এখন সন্দেহের তালিকায়। ভুয়ো নথি দিয়েই কি নিজেদের পাসপোর্টও তৈরি করেছে সমরেশ বিশ্বাস? তদন্তকারীদের সন্দেহ, বাংলাদেশেও সমরেশের কারবার রয়েছে। সেখানে এজেন্ট আছে, তার মাধ্যমে গোটা কারবার চলে। সমরেশের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে মিলেছে একাধিক বাংলাদেশি নাগরিকের নম্বর। তারা সমরেশের হয়ে সেখানে কাজ করছে বলে দাবি পুলিশের।
এদিকে, পাসপোর্ট জালিয়াতির তদন্ত নিয়ে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ। চক্র চলছে, যারা ধরা পড়েছেন তারা তো এই চক্রে শামিল, কিন্তু মাথারা কোথায়? প্রশ্ন করেন বিচারকের। আরও প্রশ্ন, নথি পরীক্ষা ছাড়া এত পাসপোর্ট ইস্যু হল কীভাবে? জাল নথিতে কীভাবে পাসপোর্ট ইস্যু? যাদের উপর এসব নথি পরীক্ষার দায়িত্ব ছিল, তারা কি ধরা পড়বেন? তাতে তদন্তকারী অফিসার জানান, তদন্ত চলছে। কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।