অর্ণব আইচ: বিসর্জনের শোভাযাত্রায় নিষিদ্ধ ডিজে। কোনও পুজো কমিটি যাতে ডিজে না বাজায়, সেদিকে কড়া নজর রাখবেন কলকাতার ২৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পিকেটে থাকা পুলিশকর্মী ও আধিকারিকরা।
দশমীর বিকেল থেকেই বেজে উঠবে বিসর্জনের বাজনা। কলকাতার বিশেষ কয়েকটি বারোয়ারি এখনও দশমীতে বিসর্জন দেওয়ার প্রথা মেনে আসছে। এছাড়া বাড়ি ও আবাসনের পুজোর প্রতিমা সাধারণত দশমীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে কলকাতার বেশিরভাগ বারোয়ারি পুজোর বিসর্জন হবে না দশমীতে। তার উপর নবমীর মধ্যে যাদের ঠাকুর দেখা শেষ হবে না, সেই দর্শনার্থীদের ভিড় থাকবে বড় মণ্ডপগুলিতে। তাই একদিকে যেমন কলকাতার বড় মণ্ডপগুলিতে থাকবে পুলিশি ব্যবস্থা, তেমনই প্রত্যেকটি ঘাটেও থাকছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, দশমীর দুপুর থেকেই কলকাতার ৩৫টি ঘাটে থাকছে জোরদার পুলিশি ব্যবস্থা। এর মধ্যে শুধু পানি ঘাটে বিসর্জন হবে না। বাকি ৩৪টি ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হবে। তার জন্য ইতিমধ্যেই পুরসভার কর্তাদের সঙ্গে পুলিশকর্তারাও ঘাট পরিদর্শন করেছেন। পরিষ্কার রাখা হয়েছে সবকটি ঘাট। ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিসর্জনের জন্য দক্ষিণ শহরতলি ও বেহালা অঞ্চলের মোট ৩৪টি পুকুর, সরোবর ও ঝিল শনাক্ত করা হয়েছে। সেগুলিতও থাকছে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা। নিরাপত্তার জন্য কলকাতা, এমনকী হাওড়ার দিকের ঘাটগুলির আশপাশে টহল দেবে কলকাতার জল পুলিশের চারটি লঞ্চ। গোয়ালিয়র ঘাট, আউট্রাম ঘাট ও নিমতলা ঘাটে থাকছে তিনটি পুলিশ ক্যাম্প।
[আরও পড়ুন: ‘পায়ে পা দিয়ে ঝগড়ার তালে সিপিএম’, কমলেশ্বরদের গ্রেপ্তারি নিয়ে বললেন কুণাল, পালটা পরিচালকের]
১৫টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট, যেখান থেকে বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন হয়, সেখানে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। জল পুলিশের দপ্তরে একটি রেসকিউ টিম তৈরি থাকছে। সেখানে থাকছেন পাঁচজন ডুবুরি। বাজে কদমতলা ঘাটে একটি বিশেষ লঞ্চে থাকছেন ৬জন ডুবুরি। এছাড়াও বাগবাজার ঘাট, বাজে কদমতলা ঘাট, গোয়ালিয়ার ঘাট ও নিমতলা ঘাটে মোতায়েন থাকছে ডিএমজির বিশেষ বাহিনী। নজরদারির জন্য সাতটি ঘাটে থাকছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রত্যেকটি ঘাটে একজন করে ইন্সপেক্টরের আওতায় মোতায়েন থাকছে পুলিশের টিম, যার নজরদারি করবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ডিসিরা।
২৩৮ টি রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে থাকছে পুলিশ পিকেট। উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোড ও রবীন্দ্র সরণি, নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ, গড়িয়াহাট মোড়ের মতো জায়গাগুলিতে পিকেটের দায়িত্বে থাকবেন এসিরা। এ ছাড়া কয়েকটি পিকেটের দায়িত্বে ইন্সপেক্টর ও বাকিগুলির দায়িত্বে সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসাররা থাকছেন। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যাতে কোনওমতেই ডিজে বাজানো না হয়, সেদিকে নজর রাখবেন পিকেটে থাকা পুলিশ আধিকারিকরা। কেউ যদি ডিজে বাজায় অথবা সেরকম কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে, সঙ্গে সঙ্গে সেই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে। আয়োজকদের গ্রেপ্তারিও করা হতে পারে।
এদিকে, দশমীর দিন থেকে ৮ অক্টোবর সকাল আটটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কলকাতায় যে কোনও মালবাহী গাড়ির যাতায়াত নিষিদ্ধ। এছাড়াও বিকেল তিনটের পর থেকে শহরের ৫৫টি রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, বিডন স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, হরিশ মুখার্জি রোড, কালী ঘাট রোড সহ শহরের ১৫টি রাস্তায় বিসর্জনের সময় পার্কিং নিষিদ্ধ। শহরের বেশ কিছু রাস্তা ওয়ান ওয়ে করা হয়েছে। নিমতলা ঘাটের দিকে যে বিসর্জনের শোভাযাত্রা যাবে, তার ঢাকিদের মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিমতলা শ্মশানের স্তব্ধতা যাতে ভঙ্গ না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।