shono
Advertisement
Kolkata

সোনার কেল্লার পাথরে খাস কলকাতায় ৬৫ ফুট জগন্নাথ মন্দির, দ্বারোদ্ঘাটন কবে?

পুরীর মন্দিরের রীতিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ পুরোহিত দিয়ে নিত্যদিন মহাপ্রভুর পুজো হবে।
Published By: Sayani SenPosted: 01:53 PM May 10, 2025Updated: 01:53 PM May 10, 2025

কৃষ্ণকুমার দাস: ঐতিহাসিক সোনার কেল্লার পাথর দিয়ে এবার খাস কলকাতাতেই তৈরি হল ৬৫ ফুট উঁচু বিশাল জগন্নাথ মন্দির। শুধু সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট চরিত্র মুকুলের কেল্লার পাথর নয়, মন্দির নির্মাণের স্থাপত্যবিদ, শিল্পী-মিস্ত্রি ও দক্ষ শ্রমিক সবই এসেছে রাজস্থানের জয়সলমেঢ় থেকে। অভিনব ও নজরকাড়া এই মন্দিরের জগন্নাথদেব মূর্তিও এসেছে শ্রীক্ষেত্র পুরী থেকেই। শ্রীক্ষেত্রের লাগোয়া এলাকার নিমকাঠ দিয়েই তৈরি হয়েছে সওয়া চার ফুট উচ্চতার ওই দারুব্রহ্ম। মন্দিরে শুধুই জগন্নাথদেব থাকবেন।

Advertisement

রহস্যঘেরা তথ্য হল, এই মন্দিরেও পুরীর মতো জগন্নাথদেবের বেদির নিচে থাকছে বিশাল গুপ্তকক্ষ। তাৎপর্যপূর্ণ হল, দিঘার মতো তিলোত্তমার এই নয়া জগন্নাথ মন্দিরে পুজো-হোম-যজ্ঞ তথা প্রাণপ্রতিষ্ঠার কাজও করবেন পুরীর মন্দিরের অন্যতম দৈতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র ওরফে রাজেশ দৈতাপতি। আগামী ১২ মে, সোমবার বুদ্ধপূর্ণিমার পুণ্যলগ্নে শুভ দ্বারোদ্ঘাটনের অপেক্ষায় থাকা নয়া এই জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা কলকাতার বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ।

ইএম বাইপাসের রুবি হাসপাতালের পাশ দিয়ে সোজা ঢুকতে থাকলে নজরে আসে আকাশছোঁয়া পর পর বহুতল। নামী আবাসন আরবানা টাওয়ার। টাওয়ারের কাছে আনন্দপুরমুখী রাস্তার মোড়ের কাছে পৌঁছতেই রাস্তা জুড়ে মানুষের ভিড়, হাতের মোবাইলে সবাই নয়া মন্দিরের ছবি তুলছেন, মাঝে মাঝে ধ্বনি উঠছে- জয় জগন্নাথ। রাজস্থানের জয়সলমেঢ় থেকে আসা শিল্পী-মিস্ত্রি ও পাথর খোদাই করা শ্রমিকরা শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং টাচ দিতে ব্যস্ত। ভিড় কাটিয়ে ব্যারিকেড পেরিয়ে মন্দিরের সিংহ দরজার সামনে যেতেই দেখা হল সুশান্ত ঘোষ ওরফে স্বরূপের সঙ্গে। বুধবার সন্ধ্যায় স্বগতোক্তির স্বরে তাঁর স্বীকারোক্তি, "বছরকয়েক আগে পুরীর মন্দিরে দাঁড়িয়েই ভেবেছিলাম, ওয়ার্ডে একটা মহাপ্রভুর মন্দির করব, অন্তরের সেই ভাবনা, সেই ইচ্ছা জগন্নাথদেব পূরণ করিয়েছেন, ভক্তদের জন্য তাঁর দেবস্থান তিনিই তৈরি করিয়ে নিলেন। এবার ভক্তরাই এই মন্দির পুজো-অর্চনা সব এগিয়ে নিয়ে যাবেন।"

নিত্যদিন মহাপ্রভুর পুজো হবে পুরীর মন্দিরের রীতিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ পুরোহিত দিয়ে, দেবতার ভোগ রান্নার আলাদা ঘর, রাজেশ দৈতাপতির থাকার ব্যবস্থা সবই সম্পূর্ণ করেছেন সুশান্ত। কালো পাথরের আটটি কক্ষের বিশাল চক্রের বেদির উপর বসানো হচ্ছে নিমকাঠে তৈরি জগন্নাথদেবকে। কিন্তু বেদির নিচের গুপ্তকক্ষের সিন্দুকে কী থাকবে? প্রশ্নের উত্তরে ঠোঁটের কোণে রহস্যজনক হাসি রেখে সুশান্তর উত্তর, "প্রভু জগন্নাথদেব ঠিক করবেন, কী থাকবে বেদির নিচের ওই ঘরের সিন্দুকে। বাকিটা তো সময় সব বলবে।" মন্দির উদ্বোধনে অভিনেতা দেব, শুভশ্রী, শ্রাবন্তী ছাড়াও টলিউড ও বিদ্বজ্জনদের অনেকেই আসবেন বলে খবর। মন্দিরে শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত জয়সলমেঢ়ের শিল্পী-মিস্ত্রিরা শোনালেন সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার সোনার কেল্লা বহু বছর আগে যে পাথরে তৈরি হয়েছিল সেই একই পাহাড় থেকে পাথর এসেছে আনন্দপুরের মন্দিরে। বছর দেড়েক আগে তিন পাঞ্জাব লরি ভর্তি করে জয়সলমেঢ়ের থেকে পাথর এসেছিল আনন্দপুরের সাত কাঠা জমির এই সবুজ ঘাসে। তারপর সেখানকার শিল্পী-মিস্ত্রিরা এসেই ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন ৬৫ ফুট উঁচু মন্দির।

মন্দিরের ঠিক সামনে যেমন কালো পিলারে উপর অরুণ দেবতা, তেমনই সিংহদুয়ার দিয়ে ঢুকেই জগন্নাথদেবের ঠিক সামনেই গরুড় আসীন। মাথার উপর বিশাল ঝাড়বাতি। নাটমন্দির ধাঁচে মন্দিরের ওখানে দাঁড়িয়েই দেবতার দর্শন হবে। দু'পাশ দিয়েই স্টিলের হাতলের সিঁড়ি। তা দিয়ে বেদিতে উঠে পুরোহিত নিত্য পুজো দেবেন, বিশিষ্টরাও দেবতাকে কাছ থেকে দর্শন করতে পারবেন। সেগুন কাঠের দশ ফুট বাই দশ ফুটের বিশাল দরজার পাল্লা, চূড়ায় পিতলের দীর্ঘ দণ্ড-সহ চক্রের মাথায় উড়বে ধ্বজা। আর এখানেও ধ্বজা পরিবর্তনের জন্য নিচ থেকে উপর পর্যন্ত লোহার বিশাল সিঁড়ি বসানো হয়েছে। তবে জগন্নাথ মন্দির করে থামছেন না সুশান্ত, এবার তাঁর টার্গেট নাটমন্দির ও বৃদ্ধাশ্রম। বলছিলেন, "পাশের জমির মালিক মন্দিরের জন্য সম্পত্তি দান করেছেন। ওখানে নাটমন্দির, সঙ্গে বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।" সমাজ যেদিকে এগোচ্ছে তাতে আগামীদিনে বৃদ্ধাশ্রম অনেক বেশি প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে, আক্ষেপ ঝরে পড়ে সুশান্তর গলায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সোনার কেল্লার পাথরে খাস কলকাতায় ৬৫ ফুট জগন্নাথ মন্দির।
  • আগামী ১২ মে, সোমবার বুদ্ধপূর্ণিমার পুণ্যলগ্নে মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন।
  • পুরীর মন্দিরের রীতিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ পুরোহিত দিয়ে নিত্যদিন মহাপ্রভুর পুজো হবে।
Advertisement