বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: গণ সংগঠনের দায়িত্ব সামলে তারপর পার্টির দায়িত্ব সামলানোটাই রেওয়াজ। আর সিপিএম (CPM) হাঁটছে উলটো পথে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া নেতারা পার্টি থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় দখল নিচ্ছেন গণসংগঠনের। সিটুর (CITU) পর একই ঘটনা কৃষক সভাতেও। বৃদ্ধতন্ত্র থেকে বেরতে পারল না কৃষক সভাও। এক প্রাক্তন এবং এক বর্তমান জেলা সম্পাদক হয়ে গেলেন কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক ও সভাপতি। নেতৃত্বের এহেন মনোভাবে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে পার্টির অন্দরেই। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শুধুমাত্র লবির জোরে গণসংগঠনের শীর্ষ পদে কেন বৃদ্ধরা বসে পড়ছেন? এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
হাওড়ার (Howrah) শরৎ সদনে সিপিএমের কৃষক সংগঠন – কৃষক সভার তিনদিনের রাজ্য সম্মেলনের শেষদিন ছিল রবিবার। কৃষকদের মধ্যে সংগঠনের প্রভাব বৃদ্ধির উপায় বের করতে আলোচনায় বসেছিলেন কৃষক সভার নেতৃত্ব। কিন্তু কৃষকদের নিয়ে আলোচনার চেয়ে বড় হয়ে উঠল পদ দখলের লড়াই। তিনদিন ধরে চরম লবিবাজির নিদর্শন মিলল।
[আরও পড়ুন: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর, জখম ৪]
শেষ পর্যন্ত কৃষক সভার সভাপতি হলেন হাওড়া জেলার সিপিএম সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার। আর সম্পাদক হলেন পার্টির বর্ধমান জেলার প্রাক্তন সম্পাদক। দুজনেরই বয়স সত্তরের উপরে। সত্তরোর্ধ্ব কেউ পার্টির পদে থাকতে পারবে না বলে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আলিমুদ্দিন। কিন্তু পার্টির সেই সিদ্ধান্তকে কাঁচকলা দেখিয়ে এবার গণসংগঠনের পদ দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল বৃদ্ধ নেতৃত্ব। পার্টির শ্রমিক সংগঠন সিটুর ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটেছিল, তার পুনরাবৃত্তি হল কৃষক সভাতেও। বৃদ্ধ নেতাদের ক্ষমতা দখলের আকাঙ্ক্ষা দেখে সমালোচনা শুরু হয়েছে পার্টির অন্দরে। অনেকের মতে, ছাত্র ও যুব সংগঠনের পদে থাকার জন্য বয়সের সীমারেখা না থাকলে সেখানেও হয়তো পার্টির এই বৃদ্ধরা পদ দখলেই মরিয়া হয়ে যেতেন।
[আরও পড়ুন: ১০ মাস গা ঢাকা দিয়েও রেহাই মিলল না, নিউটাউন পর্ন শুটিংকাণ্ডে গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত]
কৃষকসভার নেতৃত্বের ব্যর্থতার প্রভাব পড়েছে সংগঠনেও। সদস্য সংখ্যা প্রায় এক কোটি কমে গিয়েছে বলে সিপিএম সূত্রে খবর। কৃষক সংগঠনের পদে বসে থাকা নেতাদের সঙ্গে খেতমজুর ও ছোট কৃষকদের দ্রুত অনেকটাই বেড়েছে বলে খসড়া দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে। দিল্লিতে যখন দেড় বছর ধরে কৃষকরা কেন্দ্রের বিতর্কিত নয়া আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তখন কেন রাজ্যে কোনও কৃষক আন্দোলন (Farmers’ Protest) গড়ে তোলা গেল না এখনও, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সম্মেলনে।