সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বর্ষশেষে উৎসবমুখর রাজ্য। প্রস্তুতি তুঙ্গে নতুন বছরকে বরণের। রোজই প্রায় সর্বত্র কোনও না কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। দর্শকদের বিনোদনের স্বার্থে তাতে শামিল তারকাদের একটা বড় অংশই। আর তা নিয়ে এবার দীর্ঘ সোশাল মিডিয়া পোস্টে বেশ কয়েকটি গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিলেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। প্রশ্ন তুললেন দলেরই একাংশ সহকর্মীর ভূমিকা নিয়েও। সোমবার এক্স হ্যান্ডলে তাঁর প্রশ্ন, ''মঞ্চে কিছু শিল্পী, এমনকি ডাক্তারকেও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ওই তিনমাস (আর জি করের ঘটনার সময়) চূড়ান্তভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেন এঁদের ডাকা হবে?''
গত আগস্টে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা তোলপাড় ফেলেছিল গোটা রাজ্য, দেশে। এমন নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমে রাতদখলের মতো বড়সড় আন্দোলন গড়ে তুলেছিল নাগরিক সমাজ। শামিল হন সেলিব্রিটিদের একটা বড় অংশ। লাগাতার সরকারের ভূমিকার সমালোচনা শোনা যায় তাঁদের মুখে। এবার বছরশেষে সেই আন্দোলন বেশ খানিকটা স্তিমিত। এই আবহে সেলেব মহলও ফিরে গিয়েছে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে। কেউ সিনেমার প্রচার, কেউ শো করতে ব্যস্ত। তাঁদেরই নিশানা করলেন কুণাল ঘোষ। সঙ্গে প্রশ্ন তুললেন দলীয় নেতাদের একাংশের উদ্দেশেও।
সোমবার এক্স হ্যান্ডলের দীর্ঘ পোস্টে কুণাল ঘোষ লিখেছেন -
''আর জি করের ঘটনা অতি জঘন্য। দোষীর ফাঁসির হোক। মুখ্যমন্ত্রী, দল, আমরা সবাই খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদী। কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল কয়েক ঘন্টার মধ্যে। সিবিআই তদন্ত মান্যতা দিয়েছে। বিচার চলছে। সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত ও বিচারে অসঙ্গতি পাননি। সব পক্ষের আইনজীবী সেখানে ছিলেন।
কিন্তু কিছু বাম, অতি বাম, অন্ধ তৃণমূল বিরোধী এই সময় মিথ্যা, কুৎসা, ফেক অডিও, রাজনৈতিক নাটকবাজি করে মানুষের আবেগকে বিভ্রান্ত করে, একাংশের মিডিয়ার সাহায্যে, নিজেদের ধান্দায়। জঘন্য ভাষা, রোজ নাটক, সরকারের ইস্তফার দাবি, বাংলাদেশের সরকার বদলের সঙ্গে তুলনা চলছিল।
এই প্রবল মিথ্যার ঝড় এবং আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী, আমরা দুচারজন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সদস্যরা পাল্টা যুক্তি, ন্যায্য কথা ও জবাব নিয়ে সাধ্যমত লড়ে গিয়েছি। তাতে আমাদের ভয়ঙ্কর ব্যক্তি আক্রমণ ও বহু চোরাস্রোত সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, আমাদের দলের অনেক নেতা, নেত্রী, জনপ্রতিনিধি তখন নীরবে বসে জল মাপছিলেন। দলের সমর্থনে বা কুৎসার বিরুদ্ধে তাঁদের মুখে একটি কথা, এমনকি পোস্টও দেখা যায়নি। ইস্যুর ঝড়টা একটু কমে এলে এঁরা আবার জেগে উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরে আসেন। তা আসুন। কিন্তু সমস্যা হল, এখন তাঁদের অনেকের মঞ্চে কিছু শিল্পী, এমনকি ডাক্তারকেও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ওই তিনমাস চূড়ান্তভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারবিরোধিতা করেছেন। কেউ রাস্তায়, কেউ টিভিতে। যে ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে শামিল, কোনো বিবৃতিও ছিল না পাল্টা, তাঁরা নিজেদের তৃণমূল দেখাতে মরিয়া। যে শিল্পী 'চটিচাটা' বলে সরকারপন্থীদের আক্রমণ করতেন, এখন শীতের জলসার পোস্টারে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে তাঁর ছবি।
আমার বক্তব্য, এটা গণতান্ত্রিক রাজ্য। যে কেউ পারফরম করতে পারেন। কোনো বাধা নেই। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেন এঁদের ডাকা হবে? আসলে যাঁরা আগস্টের পর থেকে লড়াইটাতে ছিলেন না, সেই ভয়ংকর আক্রমণের মুখে পড়েননি, জল মাপছিলেন, তাঁরা বোধহয় এই যন্ত্রণাটা বুঝতে পারছেন না। তিনমাস আগে 'চটিচাটা', সরকার ফেলে দেবো, বাংলাদেশের মত পালাবে বলা শিল্পীদের আর যাই হোক, এখন তৃণমূল নেতাদের বিনোদনের মঞ্চে ডাকা যেতে পারে না। ওঁরা ডাকলেই আসবেন। কিন্তু ওই কজনকে তৃণমূল কর্মীরা বয়কট করুন। এবার পাড়ার জলসায় ওই কজনের কোনো জায়গা থাকা উচিত না। তৃণমূলপন্থীদের অনুষ্ঠানে তো নয়ই।''