অভিরূপ দাস: দুর্গাপুজোয় মহিষাসুর নেই। তার জায়গায় রোরাসুর! বুকের মধ্যে ঘ্যাচাং করে ত্রিশূল ঢুকে গিয়েছে। আর গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। মহিষাসুরের সেই চিরন্তন ছবি মনে গাঁথা। মানসবাগ সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপে এলে তা ধাক্কা খাবে। মহিষাসুরের জায়গায় টি শার্ট, প্যান্ট পরা এ কে? গালে কাঁচাপাকা দাড়ি। চোখ দুটো ঈষৎ ট্যারা। মুখে ফ্যালফ্যালে হাসি। ভাল করে দেখলেই ঠাওর হবে। বেলঘরিয়া মানসবাগ সর্বজনীন দুর্গোৎসবে এবার মহিষাসুরের জায়গায় খোদ রোদ্দুর রায় (Roddur Roy)। দুর্গা বধ করবেন তাঁকেই।
কেন এমন চিন্তা? পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে যিনি কলুষিত করেছেন। অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্বন্ধে। তারাই সমাজে অসুরের মতো। পুজো কমিটির মুখ্য সংগঠক অভিজিৎ চাকলাদারের কথায়, “বাকস্বাধীনতা রয়েছে। তার মানে এই নয় যে মনীষীদের সমন্ধে নোংরা ভাষা ব্যবহার করব। কুমোরটুলিতে আমরা শিল্পীর হাতে রোদ্দুর রায়ের ছবি তুলে দিয়েছি। বলেছি অসুর হবে হুবহু ওরকম। দুর্গা এখানে বধ করবে রোরাসুরকে।” পুজোর সংগঠকরা জানিয়েছেন, যেহেতু অসুরের ভূমিকায় রোদ্দুর রায়। তাই রোদ্দুর রায় আর মহিষাসুর মিলিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোরাসুর’।
[আরও পড়ুন: দু’বছর পর গড়াবে ইসকনের রথের চাকা, দড়ি টেনে উৎসবের সূচনা করবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী]
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) সম্বন্ধেও নোংরা ভাষা ব্যবহার করেছিলেন রোদ্দুর রায়। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। গত ৭ জুন গোয়া থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইউটিউবার। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ৪১৭, ১৫৩, ৫০১, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৯ ধারায় মামলা রুজু হয়। ৯ জুন তাঁকে আদালতে তোলা হলে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত তিনি।
দুর্গাপুজোয় তাঁকে মহিষাসুরের ভূমিকায় দাগিয়ে দেওয়া কতটা সঠিক? শিক্ষাবিদ সমাজকর্মী মীরাতুন নাহারের কথায়, এই মুহূর্তে বারোয়ারি পুজোগুলোয় ধর্মীয় ভাবাবেগ যত না থাকে তাঁর চেয়ে বেশি কাজ করে দর্শক টানার বিষয়টা। সেই চিন্তা থেকেই রোদ্দুর রায়কে মহিষাসুর হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তারা নিশ্চয়ই ভেবেছেন, এমনটা হলে অগুনতি দর্শক আসবে।
মীরাতুন নাহারের বক্তব্য, আজকাল মানুষের কৌতূহলকে পুঁজি করা হচ্ছে। রোদ্দুর রায় (Roddur Roy) সম্বন্ধে মানুষের কৌতূহল রয়েছে। আয়োজকরা সেটাকেই পুঁজি করছেন। পালটা যুক্তি দিয়েছেন পুজোর মুখ্য সংগঠক অভিজিৎ চাকলাদার। তিনি জানিয়েছেন, দুর্গাপুজো শুধু উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই। এর মাধ্যমে সমাজ সচেতনার বার্তা দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, “এর আগে ওসামা বিন লাদেনকেও অসুর হিসেবে দেখানো হয়েছে। আমরা বলতে চাইছি যিনি মনীষীদের কালিমালিপ্ত করছেন তিনিই এ যুগের অসুর।”