দীপঙ্কর মণ্ডল: মেধাবী ছাত্রীর কৃতিত্বের গায়ে সম্প্রদায়ের ‘ছাপ্পা মেরে’ প্রবল চাপে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস (Mahua Das)। বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। কেন তিনি উচ্চমাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রুমানার ধর্ম উল্লেখ করেছেন, তার কৈফিয়ৎ তলব করেছে রাজ্য সরকার। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্কুলশিক্ষা দপ্তরের এক কর্তা। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে ইস্তফা দিতে পারেন মহুয়া দেবী।
বৃহস্পতিবার রাজ্যে প্রকাশিত হয়েছে ২০২১-এর উচ্চ মাধ্যমিকের (Higher Secondary) ফলাফল। সাংবাদিক বৈঠক করে তা ঘোষণা করেছেন শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস। পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ হওয়ায় এ বছর কোনও মেধাতালিকা ছিল না। তবে সর্বোচ্চ নম্বর জানায় সংসদ। আর তা বলতে গিয়েই সভাপতি মহুয়া দাস বলেন, ”সর্বোচ্চ নম্বর ৪৯৯। পরিসংখ্যান যতটা দেখেছি, তাতে এই নম্বর একজনই পেয়েছে। মুর্শিদাবাদের এক মুসলিম কন্যা।” কৃতী ছাত্রীর পরিচয় দিতে গিয়ে কেন ধর্মের উল্লেখ? এই প্রশ্ন তুলে শোরগোল শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। তাঁর পদত্যাগের দাবি ইতিমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্যে শিক্ষামহলের একাংশ। শুক্রবার ‘শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ’ নামে এক শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। মহুয়াদেবী অফিসে ঢোকার সময় তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠে। সেসময় সংসদ সভানেত্রী মহুয়াদেবী জানিয়েছেন, ”আমি আবেগের বশে বলে ফেলেছি।”
[আরও পড়ুন: ‘আবেগের বশে বলে ফেলেছি’, HS’এ সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ছাত্রীর ‘ধর্ম’ বিতর্কে সাফাই সংসদ সভানেত্রীর]
শুক্রবারই শোকজ করা হয়েছে মহুয়া দেবীকে। ঘনিষ্ঠদের কাছে মহুয়াদেবী বিষয়টিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি পদত্যাগের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বলেও খবর। মহুয়াদেবী পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর দায়িত্বেও আছেন। মহুয়াদেবী সংসদ থেকে নিজে থেকে পদত্যাগ না করলে রাজ্য সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পারে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া ছাত্রীটির ধর্ম নিয়ে যেভাবে বলা হয়েছে, তা পাপ ও অন্যায়। ও ভাল ফল করেছে নিজের মেধা দিয়ে। ধর্মের ভিত্তিতে নয়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি যা বলেছেন, তাতে ভারতের সংবিধানকে অবমাননা করা হয়েছে। আমি তা সমর্থন করি না। অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে। মেধা দিয়ে সবকিছুর পথ অতিক্রম করা যায়। ধর্ম দিয়ে যায় না। রুমানা নিজের মেধা দিয়ে সবার সেরা হয়েছে।”