সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাতারাতি চাকরি হারিয়েছেন। দিশা বলতে এখন একটাই। প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারা শিক্ষক তাকিয়ে ছিলেন রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। বিশেষত সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কর্মহীন শিক্ষকদের সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা শুনতে অধীর আগ্রহে ছিলেন 'যোগ্য' শিক্ষকরা। আর সেখানে তাঁরা আশ্বাসই পেলেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, ''দু'মাসের মধ্যে যোগ্যদের চাকরি নিশ্চিত করবে সরকার। আপনাদের সার্ভিস ব্রেক হবে না। আপনাদের চাকরির দায়িত্ব সরকারের।'' তবে 'যোগ্য'দের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আরও বার্তা, নোটিস না পাওয়া পর্যন্ত আপনারা স্কুলে যাবেন, ভলান্টিয়ারিলি কাজ করুন, কেউ আটকাবে না। মনে রাখবেন, ২ মাস কষ্ট করলে ২০ বছর সুফল পাবেন।'' অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনেই 'যোগ্য'দের দিক নির্দেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ প্যানেল 'অসাংবিধানিক', 'প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি' বলে বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাতেই রাতারাতি চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক। এর মধ্যে তালিকায় রয়েছেন অন্তত ৭ হাজার 'অযোগ্য' শিক্ষক। বাকিদের মধ্যে থেকে 'যোগ্য-অযোগ্য' বাছাই করা যায়নি বলে শীর্ষ আদালতে জানায় এসএসসি। তার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টও বাছাইয়ের জন্য বাড়তি সময় না দিয়ে প্যানেল বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) সোমবার অভিযোগ তুললেন। আর তা নিয়েই ঘোর সংশয়। 'যোগ্য'দের চাকরি কেন বাতিল হবে? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তাঁদের দিশা দেখাতেই এদিন নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানে সর্বতোভাবে 'যোগ্য'দের পাশে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলছেন, ''আপনাদের শোকে আমরা পাথর। আমরা হৃদয়হীন নই। দায় ঝেড়ে ফেলতে পারি না। ভিক্ষা করে আপনাদের খেতে হবে না। স্বেচ্ছায় কাজ করুন, কেউ বারণ করবে না। যতদিন না সুপ্রিম কোর্ট যোগ্যদের তালিকা দিচ্ছে, যতদিন না নোটিস পাচ্ছেন, ততদিন বাচ্চাদের পড়ান।'' তাঁর আরও বক্তব্য, ''আমার প্রতিশ্রুতি, যোগ্যদের চাকরি কারও কেড়ে নিতে দেব না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। যাঁরা ভালো ফলাফল করে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে শীর্ষ আদালত 'চোর' বলছেন! এটা হয়? রায়ের পিছনে কোনও খেলা নেই তো? বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে না, তা আমরা আশা করি।''
আসলে সুপ্রিম কোর্ট ৩ এপ্রিল যে রায় শুনিয়েছে, তাতে বেশ কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছে। তা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ''আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে তালিকা আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বলব। ব্যাখ্যা চাইব, যোগ্য প্রার্থীদের কী করা হবে? আশা করছি, তাঁদের চাকরি না কেড়ে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আমাদের বিকল্প ভাবনা আছে। শিক্ষাদপ্তরকে বলেছি, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।'' 'অযোগ্য'দের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ''আগে যোগ্য চাকরিহারাদের জন্য ব্যবস্থা করি। তবে কেউ অযোগ্য প্রমাণিত হলে কিছু করার নেই।''