shono
Advertisement

Breaking News

নেতাজি কি সন্ন্যাস নিয়েছিলেন? কী বলছেন বসু পরিবারের প্রবীণ সদস্য

'বাঙালির কাছে নজরুলগীতি শুনে কেঁদেছিলেন গুমনামী বাবা।'
Posted: 11:47 AM Apr 28, 2022Updated: 12:34 PM Apr 28, 2022

সন্দীপ চক্রবর্তী: নেতাজি (Subhash Chandra Bose) ছোটবেলা থেকেই নিজের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার বীজ বুনেছিলেন। কৈশোরে একবার বাড়ি থেকে না বলেই স্কুলের সহপাঠী হেমন্ত সরকারকে নিয়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই সময় একমাত্র লক্ষ্য ছিল সন্ন্যাসী হওয়া। সম্ভবত বারাণসীতে দেখা হয়েছিল স্বামী ব্রহ্মানন্দর সঙ্গে। স্বামী ব্রহ্মানন্দই তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে বলেছিলেন, দেশের সেবা করাই তাঁর কাজ।

Advertisement

কোনও সাধু-সন্ন্যাসীকে দেখতে পেলেই ছুটে যেতেন নেতাজি। বাবা অশোকনাথ বসুর কাছে বারবার এইসব কথা শুনেছেন বসু পরিবারের জীবিত অন্যতম প্রবীণ সদস্য জয়ন্তী রক্ষিত। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা, “বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি তো বটেই, বরং রাঙাদাদাভাই যে সন্ন্যাসী হয়েছেন, সে ব্যাপারে আমার কোনও সন্দেহ নেই। তাই পাঁচ-ছয়বার ফৈজাবাদ গিয়েছি। ভগবানজির চিঠি দেখেছি। তাঁর কাহিনি শুনেছি। ভগবানজিকে দেখা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে আমার ধারণা দৃঢ় হয়েছে।”

[আরও পড়ুন: গোয়ায় ব্যর্থতার দায় প্রশান্ত কিশোরের! দলে ছেড়ে তোপ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতির]

মেজ পিসি গীতা বিশ্বাসকে নিয়ে জাস্টিস মুখার্জির কাছে গিয়েছিলেন জয়ন্তীদেবী। বললেন, “মেজ পিসি দাদাভাইয়ের সেক্রেটারির কাজ করতেন। মেজ পিসি মনোজ মুখোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন যে, কৈশোরে মা—বাবাকে না বলেই চলে যাওয়ায় মা নাকি কেঁদে বলেছিলেন, তুমি আমার মৃত্যুর কারণ হবে। পুরীতে ও কটকে মহানদীর ধারে ঘোরাফেরা করতেন।”

ফৈজাবাদে জয়ন্তীদেবীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল রীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত লীলা রায় বা বিপ্লবী পবিত্রমোহন রায়কে তিনি দেখেননি। অশোকনাথ বসু ওঁদের দেখেছিলেন। রীতার মা বীথি চক্রবর্তী ফৈজাবাদের ‘গুমনামী বাবা’ বা ভগবানজিকে নজরুলগীতি শুনিয়েছিলেন। বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বীথিদেবীর কাছে শুনেছেন ফৈজাবাদের সেই সন্ন্যাসীর কাহিনি।

রীতার মায়ের বয়ানে সেটা এমন: রীতার মাথায় হাত বোলাতেন। আমার কাছে একবার ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ শুনতে চেয়েছিলেন। সেই গান শোনার পর ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলেন। বলেছিলেন, ৩৬ বছর বাংলা বলিনি। আমি ওই কণ্ঠস্বর ভুলতে পারব না। লাহোরের কলেজে পড়ার সময় নেতাজির গলায় মালা পরিয়েছিলাম। প্রবাসী বাঙালি হওয়ায় কথাও বলেছিলেন। সেই মুখও ভুলব না। তবে কয়েকজন ছাড়া মুখ দেখাতে চাইতেন না। একবার সন্ন্যাসী বাবার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ডাকার দরকার হয়। ভগবানজি বাবাকে দেখে চমকে উঠেছিলেন আর ডাক্তারকে উনি বলেছিলেন, আমার নাম দুনিয়া থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাইরে বোলো না।

[আরও পড়ুন: মানসিক ভারসাম্যহীন ভাগ্নিকে ধর্ষণ মামার, পুলিশি তৎপরতায় বালুরঘাটে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত]

জয়ন্তী রক্ষিত, স্বামী অমিয়কুমার রক্ষিত ও বোন তপতী ঘোষ যতবার ফৈজাবাদ গিয়েছেন, প্রবীণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ মজবুত রাখতে তিনজনেই একসঙ্গে গিয়েছেন সেই আশ্রমে। আশ্চর্য, এতটুকু বদল হয়নি দেহাতি সেই মানুষগুলোর বয়ানে। সন্ন্যাসীর সংগ্রহে থাকা চিঠি যেমন দেখেছেন, তেমনই ফাইল প্রকাশের পর দেখেছেন নেতাজির চিঠিও। বললেন, “আমি হাতের লেখা বিশারদ নই। কিন্তু হিন্দিতে লেখা চিঠির মাঝেও বাংলা অক্ষরে হুবহু একই লেখা ‘সুতরাং’ শব্দ দেখেছি। তিনজন বিশ্বের সেরা হাতের লেখা বিশারদই দু’টি লেখাই একজনের বলে নিশ্চিত হয়েছিলেন। এফবিআই-এর হয়ে যিনি হাতের লেখা সম্পর্কিত মামলা সামলাতেন, তিনিও দেখেছিলেন। তিনি এখনও বেঁচে। আমাদের বলেছেন, মামলা করলে যেন তাঁকে ডাকি।”

দিলীপকুমার রায়ের সান্নিধ্যও নেতাজির আধ্যাত্মিকতায় উৎসাহ দিত। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র দিলীপকুমার পণ্ডিচেরীতে সুভাষকে আসতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সুভাষ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন প্রিয় বন্ধুর আমন্ত্রণ। জয়ন্তীদেবীর কথায়, “কারণ, রাঙাদাদাভাই স্পষ্ট বলেছিলেন, তোমার ওই আশ্রমে গেলে আমি আর ফিরতে পারব না। এগুলো সবটাই আমার বাড়ির গুরুজনদের কাছে শোনা। আমাদের বাড়ির ওই মানুষগুলো জানতেন যে, কতটা অধ্যাত্মপিপাসু ছিলেন নেতাজি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement