shono
Advertisement

নিউটাউন এনকাউন্টার: দাউদ হওয়ার স্বপ্ন! বাবার খাকি উরদি পরেই অপরাধে হাতেখড়ি ভুল্লারের

নিউটউনের ফ্ল্যাটে এত অস্ত্র ও বুলেট কোথা থেকে এল? উঠছে প্রশ্ন।
Posted: 08:49 AM Jun 10, 2021Updated: 01:49 PM Jun 10, 2021

অর্ণব আইচ: হয় এসপার না হয় ওসপার। নিউ টাউনের আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে গুলি চালিয়ে পুলিশ খুন করে নিজেদের বাঁচিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল জয়পাল সিং ভুল্লার ও তার সঙ্গী যশপ্রীত সিং ওরফে জসসি। আসলে যতই পুলিশ অফিসারের ছেলে হোক না কেন, হাতে নাইন এম এম থাকলে যে পুলিশই তার টার্গেট হয়ে উঠত, তার প্রমাণ মিলেছে গত মাসেই। লুধিয়ানায় একইভাবে পালিয়ে বাঁচতে গুলি চালিয়ে খুন করেছে দুই পুলিশ অফিসারকে। সেখানেও গুলিতে আহত হন এক পুলিশকর্মী। বুধবারও একইভাবে গুলি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে জয়পাল। তাতে আহত হন রাজ্য পুলিশের এক অফিসারও। এমনকী, পুলিশের অস্ত্র লুঠেরও ছক ছিল বলে সন্দেহ পুলিশের।

Advertisement

‘আভি তো খেল শুরু হুয়া হ্যায়। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।’ ২০১৬ সালে বিপরীত গ্যাংস্টার জসবিন্দর সিং ওরফে রকিকে হিমাচল প্রদেশে খুন করার পর ফেসবুকে এই কথাগুলিই লিখেছিল জয়পাল সিং ভুল্লার। এর পর থেকে পলাতক গ্যাংস্টার তার সঙ্গীদের নিয়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ-সহ চারটি রাজ্যে একের পর খুন ও ডাকাতি করে বেরিয়েছে। তার উপর সোনা ও মাদক চোরাচালান ছিলই। এমনকী, পাকিস্তান থেকে হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। পাঞ্জাব বা হরিয়ানার যুবক-যুবতীদের মধ্যে মাদক পাচার করার বড় হাত ছিল জয়পালের। পাঁচ বছরেও চার রাজ্যের পুলিশ তার টিকি ছুঁতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত জয়পাল ও সঙ্গী যশপ্রীত সিং ওরফে জসসির খেলা শেষ হল নিউটাউনে, রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতেই। এই জয়পালের মাথার উপর দশ লক্ষ টাকা ও যশপ্রীতের মাথার উপর পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ভিনরাজ্যের পুলিশ।

[আরও পড়ুন: ‘যশে’ রাজ্যের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে হিসেব দিল নবান্ন]

এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ইন্সপেক্টরের ছেলে ফিরোজপুরের বাসিন্দা জয়পাল সিং ভুল্লার ছিল রীতিমতো স্পোর্টসম্যান। জানা গিয়েছে, বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে সে। নিজে পুলিশ হতে পারেনি। কিন্তু বাবার খাকি উরদি গায়ে দিয়ে অপরাধে হাত পাকায় সে। অনেকটা মুম্বই পুলিশের হেড কনস্টেবলের ছেলে দাউদ ইব্রাহিমের মতো টাকার লোভে পাঞ্জাব, হরিয়ানার গ্যাংস্টার হয়ে ওঠে সে। ২০১৬ সালে শত্রু রকিকে খুন করার পর চার রাজ্যের অপরাধের বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠে জয়পাল। সঙ্গে নেয় তার ভাই অমৃতপাল, গগনদীপ, ভিকি গউন্ডার, প্রেমা লাহোরিয়া, মল্লা খুর্ধের বাসিন্দা বলজিন্দর সিং ওরফে বাব্বি, মোহালির যশপ্রীত সিং ওরফে জসসি, লুধিয়ানার সাহাউলির দর্শন সিংকে। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ১৫টি-সহ ৩০টিরও বেশি অপরাধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর খুন, খুনের চেষ্টা। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে চণ্ডীগড়ের কাছে বানুরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ক্যাশ ভ্যান থেকে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ডাকাতি, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩০ কিলো সোনা লুঠের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। সঙ্গীদের মধ্যে গত বছর জয়পালের ভাই অমৃতপাল ও গগনদীপকে পাঞ্জাব পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পাঞ্জাব পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় ভিকি গাউন্ডার ও প্রেমা লাহোরিয়ার। কিন্তু তাতেও থামেনি জয়পাল। তিন সঙ্গী বলজিন্দর, যশপ্রীত ও দর্শনকে নিয়ে ঘটিয়ে চলে সংগঠিত অপরাধ। এর মধ্যেই আরও এক কুখ্যাত অপরাধী লাকির সঙ্গে পরিচয় হয় দর্শন ও বলজিন্দরের। পরে জয়পাল ও যশপ্রীতের সঙ্গেও পরিচয় হয় তার। খুন ও অপহরণের অভিযুক্ত লাকি জয়পালের গ্যাংয়ের সঙ্গে শুরু করে চোরাচালান।

জয়পাল ও তার সঙ্গীদের জীবনের মোড় ঘোরে গত ১৫ মে। লুধিয়ানার জয়রাঁওয়ের শস্য বাজারের কাছে ডিউটিরত পুলিশ আধিকারিকরা দেখেন, একটি গাড়ি থেকে অন্য গাড়িতে পাচার হচ্ছে কোনও লাল ব্যাগ। মদের চোরাচালান সন্দেহ করেই তাঁরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা গাড়ির আরোহীদের লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র দেখতে চান। তখনই একটি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একজন। লুধিয়ানা গ্রামীণ পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর ভগবান সিং চিনতে পারেন যে, সে ফিরোজপুরের জয়পাল সিং ভুল্লার। তাকে ধরতে গেলেই সে দুই এএসআই ভগবান সিং ও দলবিন্দরজিৎ সিংকে গুলি করে। তাঁদের গলা ও কোমরের কাছে গুলি লাগে। গুলিতে আহত হন আরও এক পুলিশকর্মী। গুলি চালাতে চালাতেই জয়পাল ও তার সঙ্গীরা পুলিশের অস্ত্র কেড় নিয়ে পালায়। জগরাঁওয়ের কাছে একটি গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত তারা। এই ঘটনার পর আলাদা হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যায় তারা।

[আরও পড়ুন: করোনা জয়ের পরও মৃত্যু কেন? উত্তর পেতে RG Kar হাসপাতালে বাবার দেহ দান যুবকের]

মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে প্রথমে পুলিশ গ্রেপ্তার করে দর্শন সিং ও বলজিন্দর সিংকে। এর পর লুধিয়ানার খানপুর ক্যানাল ব্রিজের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লাকিকে। তাদের জেরা করে ও মোবাইলের সূত্র ধরে পাঞ্জাব পুলিশ জানতে পারে যে, ২০ মের মধ্যেই তারা ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত পার হয়েছে। এর মধ্যেই লুধিয়ানায় কুখ্যাত এক অপরাধী ভরত কুমারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ভরত কুমার তাদের জন্য এই রাজ্যের ভুয়ো নম্বর প্লেটের গাড়ির ব্যবস্থা করে। সে তাদের কলকাতার বাসিন্দা এক আত্মীয়ের কাছে পাঠায়। ওই আত্মীয়ই সাপুরজিতে ফ্ল্যাট ভাড়ার ব্যবস্থা করে। সেই আত্মীয়কেও পুলিশ খুঁজছে। সেই সূত্র ধরেই পাঞ্জাব পুলিশের একটি টিম কলকাতায় আসে। তাদের সহযোগিতায় রাজ্য এসটিএফের টিম নিউটাউনে গিয়ে ফ্ল্যাটটি শনাক্ত করে। একসঙ্গে এত অস্ত্র ও বুলেট তারা কোথা থেকে পেল, তা জানতে পাঞ্জাবে গিয়ে জয়পালের তিন ধৃত সঙ্গীকে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement