shono
Advertisement

কলমের আড়ালে মারণাস্ত্র! বাংলাদেশে ভোটের আগে উদ্ধার মুঙ্গেরি ‘পেন পিস্তল’

মুঙ্গের থেকে কলকাতা, সীমান্তে জেলা ঘুরে বাংলাদেশে পাচারের ছক।
Posted: 10:08 AM Dec 18, 2023Updated: 10:08 AM Dec 18, 2023

অর্ণব আইচ: পকেটে রাখা ছোট্ট একটি ‘কালির কলম’। আসলে মারণাস্ত্র। আরও পাঁচটি কলমের মতো তার মাথায় রয়েছে খাপ। রয়েছে বোতামের মতো একটি বস্তুও। কিন্তু ওই বোতামে চাপ দিলেই কলম পালটে হয়ে যাবে আগ্নেয়াস্ত্র (Arms)। এক বোতামের চাপেই খেল খতম! রক্তাক্ত ‘শিকার’ লুটিয়ে পড়বে মাটিতে।

Advertisement

ব্যোমকেশের গল্প নয়। বিহার (Bihar) থেকে এই মুঙ্গেরি ‘পেন পিস্তল’ কলকাতা ও সীমান্তবর্তী জেলা হয়ে বাংলাদেশে পাচারের ছক চলছে বলে খবর গোয়েন্দাদের কাছে। ২৫ হাজার টাকা খরচ করলেই হাতে গরম পৌঁছে যাচ্ছে নয়া পদ্ধতিতে তৈরি মুঙ্গেরি আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা (North 24 Parganas) থেকে চারটি পিস্তল উদ্ধার করার পর এক অস্ত্র পাচারকারীকে জেরা করে এই ব‌্যাপারে বেশ কিছু তথ‌্য আসে রাজ‌্য পুলিশের গোয়েন্দাদের নজরে। সেই সূত্র ধরে বিহারের জামালপুর থেকে তিন পাচারকারীর কাছ থেকে উদ্ধার হয় সাতটি ‘পেন পিস্তল’। এই রাজ্যের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ‌্য পেয়েই বিহারের জামালপুর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার দুই কুখ‌্যাত অস্ত্র পাচারকারী আরমান ও বিলালকে ওই পেন পিস্তল-সহ গ্রেপ্তার করে বিহার পুলিশ। যদিও রাজ্যের গোয়েন্দাদের মতে, এই রাজ‌্য থেকে কোনও ‘পেন পিস্তল’ এখনও উদ্ধার না হলেও গোপনে আগে তা পাচার হয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সামনেই বাংলাদেশের ভোট। তার আগে গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে চোরাপথে বাংলাদেশে (Bangladesh) এই অতি ছোট মাপের পিস্তল পাচারের ছক চলছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

[আরও পড়ুন: নতুন যুগের সূচনা…, বারাণসীতে মোদির ভাষণে প্রথমবার ব্যবহার হল AI প্রযুক্তি]

পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বস্তুটি দেখতে অবিকল কলমের (Pen) মতো। একটু ভারী। তবে সহজেই রাখা যায় বুকপকেট বা প‌্যান্টের পকেটে। আবার রাখা যায় পেনের বাক্সেও। খুব ভালভাবে না লক্ষ‌্য করলে কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয় যে সেটি একটি মারণাস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। আবার শুধু উপরের খাপ খুললে দেখা যায়, তাতে পেনের নিব নেই। তার বদলে রয়েছে নল। সেখান দিয়ে ভরা যায় একটি বুলেট (Bullet)। প্রয়োজনমতো সেই বুলেট ৭.৬৫ মিমি বা ৯ মিমি হতে পারে। স্প্রিংয়ের সঙ্গে আটকে যায় বুলেটটি।

এর পর ট্রিগার টানা তথা বোতাম টেপার পালা। গোয়েন্দাদের মতে, এই মুঙ্গেরি পিস্তল দূর থেকে ‘ট্রিগারিং’ করলে তা ধরাশায়ী করতে পারে যে কোনও ব‌্যক্তিকে। আর একটু কাছে বা পয়েন্ট ব্ল‌্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তা ব‌্যবহার করলে ঘটতে পারে মৃত্যুও। শুধু ব‌্যক্তিগত কারণে হামলা নয়, কোনও জঙ্গি সংগঠন ‘লোন উলফ অ‌্যাটাক’ করার ছক কষলে অতি সহজেই ব‌্যবহার করতে পারে এই পেন পিস্তল। বহু বছর আগেও এই পিস্তল ব‌্যবহার করা হয়। যদিও এখন পালটেছে তার প্রযুক্তি (Technology)। এই পিস্তল হয়েছে অনেক আধুনিক।

[আরও পড়ুন: শুধু ছুটির দিনে কাছে পান স্ত্রীকে, ‘স্বাভাবিক দাম্পত্যে’র দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ স্বামী]

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা থেকে চলন্ত স্কুটার থামিয়ে চারটি অর্ধসমাপ্ত পিস্তল, আটটি ম‌্যাগাজিন ও দশটি ৯ মিমি বুলেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার হয় বনগাঁর বাসিন্দা জামাল মণ্ডল নামে এক পাচারকারী। ধৃতকে জেরা করে রাজ্যের গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, এবার এই রাজ্যের পাচারকারীদের নজর আরও ছোট পেন পিস্তলের উপর। তারা মুঙ্গের থেকে পেন পিস্তল আনার ছক কষছে। ছক অনুয়ায়ী উত্তর ২৪ পরগনা থেকে আরমান মণ্ডল ও বিলাল মণ্ডল হাওড়া থেকে বিহারের জামালপুরে যায়। জামালকে জেরা করে পাওয়া সেই তথ‌্য রাজ‌্য পুলিশের এসটিএফ আধিকারিকরা বিহারের গোয়েন্দাদের দেন।

জানা যায়, মুঙ্গেরের একটি বেআইনি অস্ত্র কারখানায় তৈরি সাতটি পেন পিস্তল তাদের সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। একেকটির দাম ধরা হয় ১৫ হাজার টাকা করে। সেই পিস্তল কলকাতায় নিয়ে এসে একেকটি ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার ছক কষে আরমান ও বিলাল। জামশেদ নামে এক পাচারকারী তাদের এই পেন পিস্তলগুলি দেয়। তারা পুরো টাকা নগদে মেটায়। এর পর জামশেদের বাইকে করে তারা জামালপুর স্টেশনে আসে। স্টেশনে প্রবেশ করার আগেই তিনজন হাতেনাতে ধরা পড়ে বিহার পুলিশের হাতে। তাদের কাছ থেকে ১৪টি বুলেটও উদ্ধার হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, চক্রটি বাংলাদেশের এজেন্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement