বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: কংগ্রেস (Congress) ও আইএসএফের (ISF) সঙ্গে জোট প্রশ্নে এবার শক্ত হাতে ব্যাট চালালেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechury)। যোগ্য সঙ্গত রাজ্য সম্পাদকের। সীতা ও সূর্য জুটির ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে মুখে কুলুপ বিদ্রোহীদের। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত। আর ভোট প্রচারে আব্বাসকে পেতে জেলা নেতাদের মাতামাতি। পালটা জবাবে জোট বিরোধীদের মুখ বন্ধ করল আলিমুদ্দিন। যদিও সাংগঠনিক দুর্বলতার ও পাশাপাশি পার্টির কৃষক ও শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা ভোটে ভরাডুবির কারণ বলেও মনে করছে পার্টি। তৃণমূল (TMC) ও বিজেপি বিরোধিতায় ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব মানুষ খারিজ করেছে বলেও স্বীকার করেন কমরেডকুলের শিরোমণিরা।
শনিবার সিপিএম রাজ্য কমিটির পর্যালোচনা বৈঠকের প্রথমদিন জোট প্রশ্নে কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয় আলিমুদ্দিন। নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে কংগ্রেসের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকিকেও (Abbas Siddiqui) আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করায় পার্টির একাংশ। দ্বিতীয়দিন রবিবার জবাবি ভাষণে বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করেন সীতারাম ও সূর্যকান্ত। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ২০১৮ সালের পার্টি কংগ্রেস ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পার্টি কংগ্রেসেই আলোচনা হতে পারে জেলা নেতৃত্বকে স্মরণ করান সীতারাম। সঙ্গে সময় পেয়েও বঙ্গ পার্টির সংগঠন কেন মজবুত করা যায়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। পার্টির শাখা সংগঠনের কাজের মুল্যায়ন ও মানুষের কাছে পার্টি নেতৃত্বের যাওয়ার বিষটিতে যথেষ্ট খামতি ছিল বলেই মনে করেন তিনি। তবে সাংগাঠনিক দুর্বলতা কাটাতে যে নতুন মুখের সমাহার হয়েছে তাঁদের আরও বেশি করে নেতৃত্বে তুলে আনার কাজ করতে হবে বলে পরামর্শ দেন। সীতার এই বক্তব্য পার্টিতে বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান ঘটানোর ইঙ্গিত বলেই মনে করছে আলিমুদ্দিনের একাংশ।
[আরও পড়ুন: রাজ্যপাল দিল্লি থেকে ফেরার পরই হিংসা নিয়ে নালিশ জানাতে তড়িঘড়ি রাজভবনে শুভেন্দু]
ভোটের আগে বারবার বুথ কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয়নি। ফলে জনসংযোগে ঘাটতি ছিল। তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়েছে মনে করেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র (Surjya Kanta Mishra)। কংগ্রেস ও আব্বাসের সঙ্গে জোট বা তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধিতার যে কৌশল নেওয়া হয় তাতে কোনও ভুল ছিল না বলে বৈঠকে জানান। ভোটে প্রথম ও দ্বিতীয়র মধ্যে লড়াই হয়। মানুষ তৃতীয়কে নিয়ে ভাবে না। প্রচারে প্রথম থেকেই মানুষ মোর্চাকে তৃতীয় হিসাবে দেখেছে। তাই মোর্চাকে বিকল্প বলে মনে করেনি। তবে পার্টি যে আগ বাড়িয়ে জোট ভাঙার কথা বলবে না। কেউ ছেড়ে চলে গেলে বা এড়িয়ে গেলে তাদের ধরে রাখতে পার্টি উদ্যোগী হবে বলে জানিয়ে দেন সূর্যকান্ত। ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচার তৃণমূলের নির্বাচনী কৌশল ছিল। ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচারের পিছনে ‘ভোট ফর তৃণমূল’ প্রচার হয়েছে। মানুষ তাতে বিশ্বাস করেছে বলে জানান পার্টির রাজ্য সম্পাদক। আগামী ৫জুলাইয়ের মধ্যে নির্বচনী পর্যালোচনা রিপোর্টের ওপর সংশোধনী দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আরও এক রাজ্য কমিটির সদস্যর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে আলিমুদ্দিন। রবীন রাইয়ের বিরুদ্ধে পার্টির সম্পত্তি কেনাবেচায় বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কমিশনও গঠন হয়। এবার রাজ্য পার্টি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয় এদিনের বৈঠকে। সেইসঙ্গে সাঁইবাড়ি কাণ্ড নিয়ে সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য পার্টির বক্তব্য নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয় বৈঠকে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে পার্টি নেতৃত্বেকে আরও সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।