ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ‘কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে দেখ!’ রাস্তাঘাটে এমন কাউকে দেখলে প্রায় সবাই মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। আসলে এটা কিন্তু কোনও রোগ নয়। রোগের লক্ষণমাত্র। শরীরে থাইরয়েড (Thyroid) হরমোনের নিঃসরণ মাত্রাছাড়া হলে তার প্রভাব পড়ে চোখে। দু’চোখের পাতা আর বন্ধ হয় না। চোখ বন্ধ করতে গেলে অসহনীয় কষ্ট। এমনকী, রাতে ঘুমানোর সময়ও চোখের পাতা খোলা থাকে। বন্ধ করবে কী করে? দু’চোখের পাতা তো এক করা যায় না। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকলে হাইপারথাইরয়েড রোগীর চোখের জল শুকিয়ে যায়। রেটিনায় (Retina) ক্ষত তৈরি হয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই অবস্থা দীর্ঘদিন চললে একটা সময় রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। ক্রমশ অন্ধত্ব গ্রাস করে।
তাহলে উপায়? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Kolkata Medical College) ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজিতে দিনে গড়ে ১০-১২ জন রোগী আসেন। এতদিন তাঁদের পাঠানো হত মেডিসিন অথবা এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগে। দীর্ঘদিন থাইরয়েডের ওষুধ খেতে হত। এবার কিন্তু সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করল আরআইও (RIO)। কার্ডিওভাসকুলার সার্জারির সময় ফুসফুসে একধরনের পাতলা কাপড় ব্যবহার করা হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয়, ‘ফিলামেনোটাস নিটেড পলিয়েস্টার।’ দু’চোখের পাতার ভিতরের অংশ চাঁদের মতো কেটে নিয়ে ওই ‘ফিলামেনোটাস নিটেড পলিয়েস্টার’ আটকে দেওয়া হয়। আরআইও’র অধ্যাপক তথা চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সলিল মণ্ডলের কথায়, ‘‘দুই চোখে এই অস্ত্রোপচারের (Operation)পর অন্তত তিনদিন চোখ সূক্ষ্ম সুতো দিয়ে আটকে রাখা হয়। বাহাত্তর ঘণ্টা পর চোখ স্বাভাবিক।’’
[আরও পড়়ুন: শাহরুখের নেড়া মাথার ট্যাটুতেই কী লুকিয়ে ‘জওয়ান’-এর গল্প? উত্তর খুঁজতে কালঘাম ভক্তদের]
সলিলবাবুর সহকারী ডা. শাশ্বত সরকারের কথায়, ‘‘অন্তত আটটি এমন অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। প্রতিটি অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছেন। কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ এমন অস্ত্রোপচারের কথা মাথায় এল কেন? জবাবে ডা. সলিল মণ্ডল বলেছেন, ‘‘হার্টের অস্ত্রোপচারে যদি এই পলিয়েস্টার কাজে লাগতে পারে। ক্ষত নিরাময় করতে পারে। তবে হাইপার থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগীর চোখের পাতায় ছোট অপারেশন করে পাতা ঠিক করা যাবে না কেন?’’
[আরও পড়়ুন: ‘স্পর্শকাতর বুথে বাহিনী মোতায়েনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনাই ছিল না’, কেন্দ্রকে তোপ রাজীব সিনহার]
রবিবার ছুটির দিন। কিন্ত কলকাতার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সামনে এহেন অস্ত্রোপচারের তথ্য প্রকাশ করা হয়। আটজন রোগীকে কীভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, তা গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তুলে ধরেন দুই চিকিৎসক। স্বাস্থ্যভবনের বিশেষজ্ঞদের কথায়, পুরো নিখরচায় সরকারি হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হবে। বাকি রোগীরাও যাতে এই পরিষেবার সুযোগ পান তাও দেখা উচিত।