নিরুফা খাতুন: বাঁকুড়ায় খাঁচাবন্দি জিনাত এখন কলকাতায়। আলিপুর পশু চিকিৎসালয়ের কোয়ারেন্টাইন রুমে রাখা হয়েছে বাঘিনীকে। আপাতত কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাকে। তারপর ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে জিনাতকে। যদিও বন আধিকারিকদের দাবি অনুযায়ী, সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে বছর তিনেকের জিনাত।
বাঁকুড়ায় খাঁচাবন্দি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগ্রেস জিনাত। নিজস্ব চিত্র।
গত ১৫ নভেম্বর, মহারাষ্ট্রের তাডোবা ও আন্ধেরি ব্যাঘ্রপ্রকল্প থেকে সিমলিপালে আনা হয় জিনাতকে। গত ২৮ নভেম্বর ঘরছাড়া হয় সে। ঝাড়খণ্ডে জামশেদপুর বনবিভাগ হয়ে চাকুলিয়ার জঙ্গলে আসে। বেলপাহাড়ির কাঁকরাঝোড়ে দিনদুয়েক ছিল বাঘিনী। তারপর ময়ূরঝর্ণা হয়ে পুরুলিয়ায় রাইকা পাহাড়ে যায়। খাবার, জল ও পাহাড় লাগোয়া জঙ্গলে বাসস্থান অনুকূল থাকায় সেখানেই দিব্যি ছিল সে। তবে হাতি তাড়ানোর কৌশল অবলম্বন করেন বনদপ্তরের কর্মীরা। হুলাপার্টি, মশাল, পটকায় বিরক্ত হয়ে লোকালয়ে চলে যায় জিনাত। মানবাজারের ডাংরডির জঙ্গলে ছিল সে।
ডাংরডির জঙ্গলে পাহারায় বনকর্মীরা
তবে শুক্রবার রাতে জালের নিচ দিয়ে পালায় জিনাত। তারপর থেকে বর্তমানে মুকুটমণিপুরের কংসাবতী জলাধারের কোল ঘেঁষা রানিবাঁধ ব্লকের বন পুকুরিয়া ডিয়ার পার্কের কাছে গোঁসাইডিহিতে চলে যায়। বাঘিনীর ডেরা বদলের খবর পাওয়ামাত্রই এলাকায় পৌঁছন রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ পশ্চিম চক্র ) বিদ্যুৎ সরকার, বাঁকুড়ার ডিএফও দক্ষিণ প্রদীপ বাউড়ি, এডিএফও মধুরমিলন ঘোষ-সহ বনদপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিক, সুন্দরবন থেকে আসা শুটারের দল।
শনিবার বিকেলে গোঁসাইডিহিতে প্রথমবার বনদপ্তরের কর্মীদের ক্যামেরাবন্দি হয় জিনাত। বাঘিনীকে লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। তবে সে সময় গুলি লক্ষ্যভেদ হয়। এরপর দ্বিস্তরীয় জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় গোটা এলাকা। নেটের বাইরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ১০ মিটার অন্তর অন্তর নেট ফেনসিং বরাবর একজন করে কর্মীকে রাখা হয়। রাতে আরও দুটি ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়।
বাঁকুড়ায় প্রথমবার লেন্সবন্দি জিনাত
তবে বারবার বনকর্মীদের চোখে ধুলো দেয় জিনাত। রবিবার বিকেল ৩টে ৫৮ মিনিট নাগাদ আবারও জিনাতকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তাতেই কাজ হয়। ঘুমপাড়ানি গুলিতে অচেতন হওয়ার পর জাল দিয়ে বাঘিনীকে ঘিরে ফেলা হয়।
জিনাতকে বাগে আনতে বাঁকুড়ায় বনকর্মীদের তৎপরতা
এরপর বনদপ্তরের গাড়িতে তোলা হয় বাঘিনী জিনাতকে। রবিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত প্রায় ১২ টা ৯ মিনিট। বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহির জঙ্গল থেকে গ্রিন করিডর করে আলিপুর পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে আসা হয় বাঘিনীকে। তার চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এক বন আধিকারিকদের দাবি অনুযায়ী, প্রায় ৯ দিন ভালো করে খাওয়াদাওয়া হয়নি জিনাতের। আপাতত পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়ার প্রয়োজন। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাকে। তারপর ওড়িশা সরকারের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে জিনাতকে।
খাঁচাবন্দি জিনাত