স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছর মে মাসের মধ্যেই প্রাথমিকে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হবে বলে ঘোষণা করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। বুধবার তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের থেকে এখনও সম্পূর্ণ রিপোর্ট পাইনি। আমার কাছে যা খবর, মে মাসের মধ্যেই প্রাথমিকে ১২ হাজার নিয়োগ দিতে পারব।’’ প্রাথমিকে আরও কিছু শূন্যপদ চিহ্নিত করেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর। সেগুলি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত বছর অক্টোবর মাসে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলে (Primary School) প্রায় ১১,৭৬৫টি শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ইন্টারভিউ শুরু হয়েছিল ডিসেম্বরের শেষে। সম্প্রতি অষ্টম দফার ইন্টারভিউয়ের সূচি প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE)। এই দফায় আগামী ২০ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত কর্মস্থান হিসাবে হাওড়া জেলা নির্বাচনকারী প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। এদিন শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, মে মাসের মধ্যেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক, উচ্চপ্রাথমিক, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে নতুন করে স্কুলে প্রায় ২২ হাজার শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা আগেই করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তখনই জানিয়েছিলেন, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর আগে নিয়োগ বিধিতে রদবদল করা হবে। বুধবার শিক্ষামন্ত্রী জানালেন, প্রয়োজনীয় সংশোধন করে নিয়োগ বিধির খসড়া প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। যা শীঘ্রই মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। তারপরই ধাপে ধাপে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission)। ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক নিয়োগে এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে চলে যাব। ধাপে ধাপে প্রত্যেকটা স্তরে নতুন নিয়োগের পথে যাব।’’ ইন্টারভিউয়ের লাইভ ভিডিওগ্রাফি করা হবে, ওএমআর শিট ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হবে, এই রকম কয়েকটি নিয়মের সংযোজন করা হয়েছে নিয়োগের বিধিতে।
[আরও পড়ুন: বুটিক ও পার্টনারশিপে প্রোমোটিং ব্যবসার হদিশ, ইডি’র স্ক্যানারে শান্তনুর স্ত্রীর বিপুল সম্পত্তি]
অন্যদিকে, সাম্প্রতিককালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে কয়েক হাজারের। গত মঙ্গলবার সেই প্রসঙ্গ তুলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বিচারপতিদের কাছে আরজি জানিয়েছিলেন, যারা অন্যায় করেছে, তাঁদের শাস্তি হোক, কিন্তু, চাকরি খাবেন না। আইন অনুযায়ী চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সার্বিকভাবে মানবিকতার জায়গা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এই আর্জি জানিয়েছেন বলে মত শিক্ষামন্ত্রীর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাদের চাকরি গিয়েছে, আদালতে নির্দেশেই গিয়েছে। চাকরি বাতিলের তালিকায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তো আছেনই, তার বাইরে সাধারণ মানুষও আছেন। সেই সাধারণ মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন। আমার মনে হয়, মুখ্যমন্ত্রী একটা সার্বিক জায়গা থেকে, মানবিকতার জায়গা থেকে একটা কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই বলে এসেছেন, কারও চাকরি যাক, পেটের ভাত যাক এটা আমরা চাই না।’’ একইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর চাকরি গিয়েছে তাঁরও, যিনি বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরও।’’
[আরও পড়ুন: মান্থার বাড়ির সামনে পোস্টার মামলা: ‘তদন্তের নামে লুকোচুরি খেলবেন না’, ক্ষুব্ধ হাই কোর্ট]
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির প্রশ্নে ব্রাত্য বসুর বক্তব্যে উঠে আসে ব্যাপম দুর্নীতির কথা। বলেন, ‘‘ব্যাপমের দুর্নীতি এর থেকে অনেক বেশি। আমাদের রাজ্যে দুর্নীতির জন্য কেউ জেলে গেছেন, জেলে আছেন, আদালতে লড়ছেন, আদালতে পেশ করা হচ্ছে, আবার জেলে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু, ব্যাপমের (Vyapam) মতো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ করে একটা ট্রাক এসে মেরে দিল, এমন ঘটনা তো ঘটেনি। ওখানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের একজন চেয়ারম্যানকে খুন হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পাশে অন্য হাতের লেখা সুইসাইড নোট পড়ে ছিল। এরকম আমাদের রাজ্যে কিন্তু হয়নি। ফলে, আমাদের রাজ্যে এটা প্রথম হচ্ছে এটা বলা বোধহয় ঠিক হবে না।’’